রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র و دم করি বৌদ্ধ ভিক্ষুর রূপান্তর। শুনিতে পাই, সংহিতাকারেরাই কলিকালে ভিক্ষুর আশ্রম নিষেধ করিয়া গিয়াছেন, সেটা বোধ হয় ভিক্ষুগণের উৎপাতেরই ফল। ভিক্ষুর আশ্রম অতি কঠিন আশ্ৰম । ভিক্ষু সমাজের আশ্রয়ে বাস করেন ও সমাজের নিকট আপনার অন্ন বস্ত্র যাহা কিছু আবশ্বক, তাহ আদায় করেন ; কিন্তু সমাজ তাহার নিকট বিনিময়ে কিছু দাবী করিতে পায় না। এইরূপ স্থলে ভিক্ষুর জীবন দায়িত্বহীন, নীতিবজ্জিত জীবনে,পরিণত হইবার অত্যন্ত আশঙ্কা থাকে। কিন্তু সেকালের অর্থাৎ মন্থর সময়ের ভিক্ষুকে অত্যন্ত কঠিন এপ্রেটিসের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া প্ৰব্ৰজ্যাশ্রমে প্রবেশ করিতে হইত। বাৰ্দ্ধক্যেই প্ৰব্ৰজাগ্রহণ বিহিত ছিল । জীবনের কার্য্য সম্পাদন করিয়া যখন অবসর লইবার সময়, তখনই বুদ্ধের পুত্র পেীএাদির স্কন্ধে সংসারভার সমর্পণ করিয়া ক্লাস্ত দেহে জরাজীর্ণ শরীর ও অবসয় মন লইয়া সংসারের নিকট ছুটি লইতেন। সংসারের মধ্যে থাকিয়া সংসারের উপর আপমার, বোঝা সমর্পণ র্তাহারা কতকটা অন্যায় মনে করিতেন ; সংসার তাহাদিগকে আর জীবন-সংগ্রামে লিপ্ত রাখিয়া কষ্ট দেওয়া অকৰ্ত্তব্য মনে করিতেন। উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে র্তাহারা ছুটি লইতেন ; আপনার ক্লত কার্য্যের পেনসন স্বরূপ যৎকিঞ্চিৎ মাত্র অর্থাৎ প্রাণরক্ষার উপায় মাত্র সংসারের নিকট দাবি করিতেন। সংসার তাহাদের নিকট বিনিময়ে কিছু দাবী করিত না। কিন্তু এই বন্দোবস্তে ভিক্ষুর আশ্রমে প্রবেশের পূৰ্ব্বে বিষম পরীক্ষা দিতে হইত। ঐ পরীক্ষা বানপ্রস্থাশ্রম। বনবাসীর জীবন অতি কঠোর জীবন ; তাহাকে বনে বসিয়া সংসারের জন্য যৎপরোনাস্তি সহিতে হইত। অথচ সংসারের নিকট বিশেষ কিছু পাইতেন না, এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইলে ভিক্ষুর পেনসনে অধিকার— ইহাই বোধ করি সাধারণ নিয়ম ছিল। ভিক্ষুর আশ্রম প্রবেশে এইরূপ কঠোর নিয়মের বাধাৰ্বাধি থাকায় নীতিহীন ও দায়িত্বহীন ভিক্ষুর উৎপাত ঘটিবার সম্ভাবনা অধিক ছিল, বোধ হয় না। বানপ্রস্থের কঠোর পরীক্ষার পর ভিক্ষুর জীবন গ্রহণে সকলের সাহসে কুলাইত, তাহা বোধ হয় না। দ্বিজাতি মাত্রই বৃদ্ধ বয়সে ভিক্ষু হইতেন, এইরূপ মনে করিবার সম্যকৃ কারণ নাই। দ্বিজাতি ভিন্ন শূদ্রগণের অর্থাৎ সমাজের অধিকাংশ লোকের ভিক্ষু হইবার অধিকারই ছিল না। কাজেই সমাজে কোনও কালে ভিক্ষুর সংখ্যা যে খুব বাড়িয়াছিল, তাহা বোধ হয় না। কিন্তু বেদে নাকি একটা বিধি আছে, বৈরাগ্য জন্মিবা মাত্র যে-কেহ যে-কোন বয়সে প্রত্ৰজ্য গ্রহণ করিতে পারে। যাহার বৈরাগ্য জন্মিয়াছে, তাহাকে আটকাইয়া রাখা দায়—বুদ্ধদেব বা শঙ্করাচাৰ্য্য বা চৈতন্য, কাহাকেই কেহ কোন উপায়ে আটকাইয়া রাখিতে পারে নাই। জোর করিয়া আটকাইয়াও লাভ নাই। কিন্তু আশঙ্কা থাকে ভও বৈরাগ্যের। কৃত্রিম বৈরাগ্যের আক্রমণ হইতে গৃহস্থাশ্রমকে রক্ষা করিবার জন্য মম্বাদি শাস্ত্রকার যে বিশেষ ব্যবস্থা করিয়াছিলেন, তাহা সঙ্গতই মনে হয় ।
পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩২৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।