পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নানাকথা : বর্ণাশ্ৰমধৰ্ম্ম Q: ግ ফলে বৃদ্ধ বয়সে কঠোর বানপ্রস্থের পর প্রত্ৰজ্য গ্রহণ করিবে, এই সাধারণ নিয়ম প্রচলিত থাকিলেও, সেকালেও অনেকেই বৈরাগ্য আশ্রয় করিয়া, অকালে প্রব্রজিত হইত, সংশয় নাই ; এবং প্রকৃত বৈরাগীর অনুকরণে বৈরাগীর দলের স্বষ্টি হইয়াছিল, ইহাও সম্ভব। বুদ্ধদেবের সময়ে অথবা কিছু পূৰ্ব্বে এইরূপ অকালবিরাগীর দল অনেক হইয়াছিল, এবং বৈরাগ্যআশ্রয়টা একরকম ফ্যাশান হইয়াছিল, মনে এই রকম সন্দেহ হয়। বুদ্ধদেব স্বয়ং প্রকৃত সন্ন্যাসী ছিলেন ; তাহার সন্ন্যাসের বৈশিষ্ট্য এই যে, তিনি কৰ্ম্মত্যাগ না করিয়া কৰ্ম্মই জীবনের অবলম্বন করিয়াছিলেন। এত বড় কৰ্ম্মী সন্ন্যাসী ভূপৃষ্ঠকে আর কখনও পবিত্র করে নাই। কিন্তু তিনি শাস্ত্রের ব্যবস্থা লঙ্ঘন করিয়া সন্ন্যাস গ্রহণের দ্বার ੱਚ ভাবে মুক্ত করিয়া দিলেন, দ্বিজ-শূদ্রনিব্বিশেষে, স্ত্রী-পুরুষানবিশেষে সন্ন্যাসী হইতে থাকিল। পুত্রের প্রবজ্য গ্রহণের পর • অনুতপ্ত হইয়া বয়সের একটা নিয়ম করিয়াছিলেন ; অন্ততঃ পিতামাতার অসম্মতিতে কেহ সংসার ত্যাগ করিবে না, এইরূপ একটা নিয়ম করিয়াছিলেন, এবং স্ত্রীজাতিকে সন্ন্যাস প্রবেশের অল্পমতি দিয়াও শেষে অনুতপ্ত হইয়া বলিয়াছিলেন, মৎপ্রচারিত সদ্ধৰ্ম্মের আয়ুষ্কাল এইবার কমিয়া গেল। তাহার অনুতাপ অনুচিত হয় নাই। কেন না, দেশটা কিছু দিনেই কপট সন্ন্যাসীর দলে ভরিয়া গেল। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের মধ্যে অনেক বড় বড় সাধু মহাপুরুষ জন্মিয়াছিলেন। অনেক পণ্ডিত, পবিত্রচিত্ত মহাত্মা বস্বধ অলঙ্কত কবিয়াছিলেন সত্য বটে, কিন্তু কপট সন্ন্যাসীর উৎপাত হইতে গৃহস্থকে রক্ষণ করিবার সম্যকৃ উপায় বুদ্ধদেব কিছুই করিয়া যান নাই। যাহা করিয়াছিলেন, তাহা নিস্ফল হইয়া,ছল। ফলে যে সমাজ-বিপ্লব ঘটে, তাহাতে সনাতন ধৰ্ম্ম উচ্ছিন্ন হইবার উপক্রম হয়। বর্ণাশ্ৰমধৰ্ম্ম বিপৰ্য্যস্ত হইবার উপক্রম হয় । স্বেচ্ছচারী মঠধারী মহান্ত ও ভিক্ষুর উৎপাতে দেশ হইতে সদাচার বিলুপ্ত হইবার উপক্রম হয় । সাধারণ মনুষ্য পৌরুষ শক্তি অপেক্ষা অপৌরুষেয় শক্তিতে অধিক আস্থাবান। বুদ্ধদেব অপৌরুষেয় শ্রুতিকে অতিক্রম করিয়া পৌরুষ যুক্তির প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন। প্রাচীন পরীক্ষিত ঐতিহাসিক আদর্শকে ঠেলিয়া দিয়া নৃতন অপরীক্ষিত আদর্শকে স্থাপিত করিয়াছিলেন। তাহার ফলেই এই সমাজ-বিপ্লব ও স্বেচ্ছাচারের প্রাদুর্ভাব। যদি কাহারও দ্বিধা থাকে, তিনি তান্ত্রিক বৌদ্ধগণের ইতিহাসটা পড়িয়া দেখিবেন। শঙ্করবিজয় গ্রন্থে ও তাহার যথেষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়। ইউরোপে মঠধারী মহাস্তের ও ভিক্ষুকের উপদ্রব রাজশাসন দ্বারা নিরাকৃত হইয়াছে। ভারতবর্ষে রাজশাসন এ সকল স্থলে হস্তক্ষেপে সাহস করে না । কিন্তু সমাজ শেষে বিদ্রোহী হইয়া উঠিয়াছিল। বৌদ্ধ নাম দেশের মধ্যে হেয় হইয়া পড়ে। ভারতবর্ষের বৌদ্ধগণকে কেহ হিমালয়পারে রাখিয়া আসে নাই ; কিন্তু তাহারা আর সমাজে স্বনামে পরিচিত হইতে সাহস করে নাই। ভিক্ষুর আশ্রম গ্রহণ বোধ হয় এই কারণেই শাস্ত্রকারগণ কত্ত্বক নিষিদ্ধ হইয়াছিল।