পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Vరిy রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র লইতে হইবে। তাহাতে ধন প্রাণ লইয়া টানাটানি পড়ে নাচার। দৈব ঘটনার আবার প্রতিবিধান কি ? যাহাকে আধুনিক ভাষায় রাজনৈতিক জীবন বলে, স্বদেশভক্তি, জাতীয় ভাব প্রভৃতি যাহার লক্ষণ, ভারতবাসীর সেই জীবনটা একেবারে নাই। আর সেকাল হইতে আজি পৰ্য্যন্ত ভারতবাসীর প্রকৃতি ঠিক সেইরূপই রহিয়াছে। ভারতের প্রজা ভারতের রাজাকে খাজনা দেয়, সম্মান করে ও র্তাহার আজ্ঞামতে চলে। কিন্তু তাহার ভাগ্যবিপৰ্য্যয়ে সে সম্পূর্ণ উদাসীন, মুসলমানের হাত হইতে রাজশক্তি ইংরাজের হাতে গেল, তখনও ভারতীয় প্রজ। তাহাতে অণুমাত্র বিচলিত হয় নাই ; তাহার মনে তজ্জন্য কোন দুঃখের উদয় বা আনন্দের উদয়ও হয় নাই, দেশের মধ্যে ষে একটা ওলটপালট ঘটিয়া গেল, বিশ কোটির মধ্যে নিশ কোটি লোক, বোধ হয় তাহার কোন সংবাদ রাখাও দরকার বোধ করেন নাই। মুসলমানের কৰ্ম্মচারী খাজনা আদাম করিতে আসিলে আমরা আপত্তি না করিয়া খাজনা দিতাম ; এখন ইংরাজের কৰ্ম্মচারী খাজনা আদায় করিতে আসে, আমরা তাহার হাতে খাজনা দিই। তাহার খাজনা গ্রহণের অধিকার অাছে কি না, জিজ্ঞাসার দরকার হয় না । এই রাজনৈতিক জীবনের অভাবের কতকগুলা স্কুল লক্ষণ দেখা যায়। এ দেশে রাজায় প্রজায় কখন বিরোধ নাই ; আবার রাজায় প্রজায় সহানুভূতি বা স্বার্থের টানও নাই । রাজা যিনিই হউন, তাহাকে খাজনা দিতে আপত্তি করিতে নাই—র্তাহার আদেশ মানিয়া চলা উচিত। তিনি সুখে রাখেন—স্নখের বিষয় ; তিনি নিগ্রহ করেন, তথাস্তু । দুঃখের বিষয় বটে, কিন্তু রাজকুত অত্যাচারের আবার প্রতিবাদ কি ? তাহা হইলে ত ভূমিকম্প ও মারিভয়েও প্রতিবাদ আবশ্বক হইতে পারে। উভয়েরই পক্ষে কোন যুক্তি নাই। ইংরাজ নূতন রাজা হইয়া আমাদিগকে আরামে রাথিয়াছেন, পরম সৌভাগ্য ; আমরা ইংরাজকে আশীৰ্ব্বাদ করিব । ইংবাজ যদি অত্যাচারই করিতেন, তাহা হইলেও আমরা তাহ সহিতাম। বিধাতার বিধান,—মানুষে কি করিবে ? আর একটা লক্ষণ—এই আসমুদ্র হিমাচল আমার স্বদেশ। হিমাচলের ও-পারে ও সমুদ্রের পারে স্লেচ্ছভূমি ; সেখানে আমাদের যাইতে নাই ও সে দেশের সংবাদ গ্রহণের কৌতুহলও অস্বাভাবিক। সে সকল দেশে ম্লেচ্ছ বাস করে ও হয়ত গন্ধৰ্ব্ব ও বিদ্যাধরাদিও লীলাখেলা করিয়া থাকে। তাহাদের কাজকৰ্ম্ম, আহার ব্যবহার জানিয়া আমাদের কোন ফল নাই। কিন্তু হিমাচল হইতে সমুদ্র পর্য্যন্ত এই দেশটুকু আমাদের। কামরূপ হইতে সিন্ধুতট পর্য্যন্ত এবং হরিদ্ধার হইতে কুমরিকা পৰ্য্যস্ত আমাদের ধৰ্ম্মকৰ্ম্মের স্থান, এই দেশে আমাদের দেবমন্দির, আমাদের তীর্থস্থল সমস্ত ছড়াইয়। রহিয়াছে । জামাদের স্বজাতি, স্বধৰ্ম্ম, আত্মীয়, অন্তরঙ্গ সকলেই এই পরিধির মধ্যে বাল করে। কিন্তু তাই বলিয়া বিধৰ্ম্মী আসিয়া পঞ্জাব আক্রমণ করিয়াছে, তাহাতে ৰূপালীর মাথাব্যথার প্রয়োজন কি? অথবা বাঙ্গালী বিধস্বীর পদানত হইল, তাহাতে মহারাষ্ট্রের কি আসে যায় ?