পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র :58י কৰ্ম্মঠ, অপ্রধারী সৈনিকে পরিণত । এই অংশে ভারতবর্ষের ইতিহাস সম্পূর্ণ বিপরীত। এখানে সমগ্র জাতি কখনও এক হইয়া জমাট বাধে নাই। এক মহাসাম্রাজ্যের অভ্যস্তরে সকলেই কখনও স্থান লাভ করে নাই। কতকগুলি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্য সমগ্র মহাদেশকে বিভক্ত রাখিয়াছিল। কিন্তু এই একটি রাজ্যের অধিবাসীরা কখন এক জাতীয়ত্ব প্রাপ্ত হয় নাই। ইউরোপে যেমন ফরাসী, জাৰ্ম্মান, ইতালীয় প্রভৃতি কয়েকটি দৃঢ়বদ্ধ জাতির সৃষ্টি হইয়াছে, যাহাদের স্বার্থ পরস্পরের প্রতিকূল, যাহাঁদের পরস্পরের মধ্যে কোনরূপ সহানুভূতির বন্ধন নাই, ভারতবর্ষে সেরূপ কয়েকটি খণ্ড জাতি গঠিত হইতে পারে নাই। ভারতবর্ণের ভৌগোলিক অবস্থা কতকটা ইহার জন্য দায়ী। ইটালীর একটা ভৌগোলিক সীমানা আছে, স্পেনের আছে, গ্রীসের আছে, ইংলণ্ডের আছে, ফ্রান্স ও জাৰ্ম্মানির মধ্যে ও একই সীমান খুজিলে মিলিতে পারে। বাঙ্গলার কোন নিদিষ্ট সীমান। নাই, পাঞ্জাবেরও সীমান। নাই, মধ্যদেশেরও নিদিষ্ট সীমান নাই । এক বিশাল সমতল প্রান্তবের এক একু অংশ লইয়া এক এক জাতি বাস করে। সেইরূপ কর্ণাট ও দ্রাবিডের মধ্যে, দ্রাবিড় ও মহারাষ্ট্রের মধ্যে কোন ভৌগোলিক সীমারেখা প্রকৃতি নির্দেশ করিয়া দেন নাই। উৎকলের ভাষাকে বাঙ্গালী পাবহাস করিয়া থাকে বটে, কিন্তু কোন স্থানে বাঙ্গালার শেষ, আর কোথায় উৎকলের আরম্ভ, তাহার নির্দেশ একবারে অসাধ্য। কাজেই প্রজাগণের মধ্যে জাতিবিভাগ ও জাতিবিদ্বেষ স্থাপিত হয় নাই । বাঙ্গালী তাহার প্রতিবেশী হিন্দুস্থানীকে বিশেষ প্রেমের চক্ষে দেখে না, কিন্তু উভয়ের মধ্যে কোন ধৰ্ম্মগত বিদ্বেষও বর্তমান নাই । এইরূপ সৰ্ব্বএ । প্রাচীন ভারতবর্ষে একই সময়ে অনেকগুলি রাজা থাকিতেন। কিন্তু কোন রাজারই বাজ্যের স্থায়ী সীমাচিহ্ন ছিল না । যিনি যতটা অধিকার করিয়৷ থাকিতে পাবিতেন, তাহাই তাহার রাজ্য। রাজায় রাজায় লড়াই হইত বটে, যিনি যখন একটু প্রবল হইতেন, তিনিই একবার করিয়া দিগ্বিজয়েও বাহিব হইতেন । কিন্তু আবহমান কাল ধরিয়া উভয়ের মধ্যে বদ্ধমূল বিদ্বেযের উদাহরণ প্রায় ঘটিত না। ইউরোপের ইতিহাসে কালেব ক্ৰষ্টি হইতে আজি পৰ্য্যন্ত ফরাসীর সহিত ই-বাজের বা জাৰ্ম্মানের সহিত ফরাসীর যে সম্বন্ধের উল্লেখ করে, সেক্টরূপ সম্বন্ধের উদাহরণ ভারতবর্ষের মধ্যে নাই । ভারতবর্ষে জাতিভেদের উল্লেখ কবিয়। র্যাহারা একটা প্রকাণ্ড অনর্থের কারণ আবিদাব কবিয়া থাকেন, তাহারা ঠিক বুঝাইয় দেন না, জাতিভেদ স্থত্রে রাজনৈতিক দুৰ্ব্বলতা কিরূপে উৎপন্ন হইতে পারে। জাতিভেদ একটা বৈষম্য বটে, কিন্তু তাহ! রাজনৈতিক অধিকাব লইয়া নহে, তাহ সামাজিক অধিকার লইয়া। খুব সম্ভব, ইতিহাসের পুরাতন পাতা উন্টাইলে এই বৈষম্যের মূলে রাজনৈতিক কাবণ আবিস্কৃত হইতে পারে, কিন্তু ভারতবর্ষের ইতিহাসের ষে অংশের সহিত আমাদের পরিচয়, তাহার মধ্যে কোনও রাজনৈতিক বিবাদের অস্তিত্ব দেখা যায় না। এই কাল মধ্যে ব্রাহ্মণ কখনও অস্ত্র ধরিয়া শূদ্র দমনে প্রবৃত্ত হন নাই, শূদ্র কখনও অস্ত্র লইয়া ব্ৰাহ্মণের কণ্ঠচ্ছেদে উষ্ঠত হয় নাই। ব্রাহ্মণের প্রতি প্রেম শূত্রের না থাকিতে