নানাকথা : শিক্ষাপ্রণালী W stvo নাই ; যে মুখস্থ করে, সে-ই তরিয়া যায়। শিক্ষার ভার স্বতন্ত্র বিদ্যালয়ের হাতে ; কিন্তু প্রকৃত শিক্ষাদানে প্রকৃত বিদ্যালয়ের জীবনের স্থায়িত্ব সম্ভাবনা কতটুকু, তাহ যিনি জানেন, তিনিই বুঝিবেন । বিদ্যালয় শিক্ষা দেয় না, বিদ্যালয় পরীক্ষার জন্য ছাত্ৰ তৈয়ার করে মাত্র। - সেই পদ্ধতিই বা আবার কেমন ? ইংরাজেরা আজকাল সকল কাজ কলে চালান। বিজ্ঞানের উন্নতির সহিত নানা যন্ত্রের আবিষ্কার হইয়াছে। জল তোলা, গাড়ী টানা, আলো জালা, সমস্তই যন্ত্রের সাহায্যে সম্পাদিত হয়। ইংরাজের সাম্রাজ্যে শাসনকাৰ্য্য যন্ত্রে চলে। এ দেশে ইংরাজ প্রবত্তিত শিক্ষাকার্য্যও যন্ত্রে সম্পাদিত হয়। ছাত্রের পিতা বা অভিভাবক যথাসময়ে বালককে কলে ফেলিয়া আসেন ; এবং কিছু দিন পরে কল হইতে বাহির করিয়া লয়েন। বালক যখন কল হইতে বাহির হইয় আসে, তখন তাহার ললাটপটে ‘শিক্ষিত' শব্দ যদি অঙ্কিত থাকে, তাহা হইলেই বুঝিতে হইবে—পরিশ্রম ও ব্যয় বিধান সার্থক হইয়াছে ; বালকের মন-শরীরের অভ্যন্তরে কোন পরিবর্তন ঘটিয়াছে কি না, দেখিয়া লওয়া অনাবশ্যক। মধ্যে শুনিয়াছিলাম, এডিসন সাহেব সন্দেশ তৈয়ার করিবার কল বাহির করিয়াছেন,— কলের এক প্রাস্তে একট। গরু ও কয়েকগাছি ইক্ষুদণ্ড পূরিয়া দিলে অন্য প্রান্ত হইতে সন্দেশ বাহির হইয়া আসে । গরু ও ইক্ষুদণ্ডকে আহারোপযোগী সন্দেশে পরিণত করিবার জন্য যে সকল প্রতিভা আবশ্বক, তাহ যন্ত্রটি নীরবে ধারাবাহিকরূপে সম্পন্ন করিয়া থাকে। আমাদের শিক্ষাযন্ত্রে লব্ধপ্রবেশ বালক যখন শিক্ষিতের ছাপ লইয়া বাহির হইয়া আসে, তখন যন্ত্রসম্পাদিত বিকৃতিটা সন্দেশের মত মধুর হয় কি না, তাহা স্বধীগণ বিবেচনা করিবেন। জীব-শরীরকেও আজিকালি ষন্ত্রের সহিত উপমিত করিবার প্রথা দাড়াইতেছে। জীবদেহ অনেক বিষয়ে যন্ত্রের মত হইলেও উভয়ের মধ্যে একটা পার্থক্য আছে। শরীর-যন্ত্রের বিবিধ অঙ্গের মধ্যে পরস্পর যতটা সম্বন্ধ আছে, নিজীব ষন্ত্রের বিবিধ অঙ্গের মধ্যে পরস্পর তেমন সম্বন্ধ নাই। ঘটিকাচক্রের একখান| চাকা ভাঙ্গিয়া গেলে যন্ত্র কিছু কালের জন্ত বন্ধ হয় বটে, কিন্তু তাহাতে অন্যান্য চাকা ও অন্যান্য অঙ্গ নষ্ট হয় না ; সেই ভাঙ্গ চাকখানি মেরামত করিয়া দিলে ঘটিকাযন্ত্র আবার পূর্বের মতই চলিতে থাকে। কিন্তু জীবদেহের একটা অঙ্গ বিকৃত বা ব্যাধিগ্রস্ত হইলে অনায়াসেই অন্যান্য অঙ্গও অল্প বা অধিক মাত্রায় বিকৃত ও ব্যাধিগ্রস্ত হইয়া পড়ে, রক্তের দোষে মাথা খারাপ হয়, মাথার দোষে হাত পা নষ্ট হয় ইত্যাদি। এবং একটা অঙ্গ একবার নষ্ট হইয়া গেলে তাহার মেরামতও সহজে চলে না। নিজীব যন্ত্রের এক স্থানে বিকৃতি ঘটিলে বিকৃতিটা সেইখানেই আবদ্ধ থাকে ; আর সজীব যন্ত্রের একটা স্থানে ব্যাধি ঘটিলে সেই ব্যাধি ক্রমে প্রসার লাভ করিয়া সমগ্র মন্ত্রকেই আক্রমণ করে। এক কথায় ইংরাজিতে যাহাকে সিম্পাথি বলে, জীবদেহের বিবিধ অঙ্গের মধ্যে তাহা বৰ্ত্তমান ; যন্ত্রদেহের বিবিধ অবয়ব মধ্যে তাহা বর্তমান নাই । আমাদের ভারত সাম্রাজ্যের শাসন-প্ৰণালীর সহিত আমাদের শিক্ষাপ্রণালীর তুলনা করিতে মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয়। উভয়ই মন্ত্র সাহায্যে সম্পাদিত হয়। ইংরাজের কুশিশ-২৩
পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৫৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।