w©ግቆ.. রামেন্দ্রস্বন্দর রচনাসমগ্র করিয়াছিল, সেই দিনই হাতে কলমে শিক্ষার প্রথম বন্দোবস্ত হইয়াছিল। মতুয়া সমাজ মাত্রেই শিল্পোৎপন্ন বিবিধ সামগ্রীর আবশ্যক, এবং সেই শিল্পদ্রব্য নিৰ্ম্মাণের কৌশল এক শ্রেণীর মহন্তকে ষত্বপূর্বক শিক্ষা করিতে হয়। আমাদের দরিদ্র সমাজের অবিশ্বকমত শিল্পদ্রব্যনিৰ্ম্মাণের ব্যবস্থা এত কাল আমাদের সমাজের মধ্যেই বর্তমান ছিল। চাষার ছেলে ছেলেবেলা হইতে চাষ শিখিত, ছুতারের ছেলে ছেলেবেলা হইতেই ছুতারের কাজ শিখিত। তন্তুবায় পুত্র আপন ঘরে বসিয়া তাহার পৈতৃক যন্ত্রাদি লইয়া তাত বেনা শিখিত। জাতিভেদে ব্যবসায়ভেদের ব্যবস্থা থাকায় অতি অল্প ব্যয়ে দরিদ্র শিল্পীব পক্ষে শিল্পশিক্ষার বন্দোবস্ত ছিল। ঘরের ভাত খাইয়৷ পিতৃপিতামহ হইতে প্রাপ্ত যন্ত্রাদির সাহায্যে আপনার পিতা পিতামহের নিকট বা আত্মীয় স্বজনের নিকট শিল্পকৌশল অভ্যাস কবাব যে সুন্দব বন্দোবস্ত আমাদের দেশে এতকাল প্রচলিত ছিল, এবং এখনও আছে, তাহাতে সমাজের সমস্ত প্রয়োজনীয় কাৰ্য্যই এত কাল সম্পাদিত হইয়াছে। এবং এই শিক্ষাপ্রণালী অনুসারে যে সকল শিল্পিসম্প্রদায় এ দেশে জন্মিয়াছে, তাহদের কারুকার্য্য অনেক বিষযে এখনও বৈদেশিকগণেবও বিস্ময়োৎপাদক হইয়া আছে। এত কাল পর্য্যন্ত আমরাই শিল্পসামগ্ৰী বিদেশে যোগাইতাম, ইউরোপের লোকে এ দেশের শিল্পদ্রব্য লইয়া যাইবার জন্যই এ দেশের সহিত বাণিজ্য-সম্বন্ধ স্থাপিত করিয়াছিল। কিন্তু বৰ্ত্তমান কালে ষ্টীম এঞ্জিনেব প্রতাপে এখন পুরাতন বন্দোবস্ত সমস্তই উণ্টাইয়া গিয়াছে। এখন ইউরোপের লোকেই সমস্ত পৃথিবীকে শিল্পের সামগ্রী যোগাইতেছে। ইউরোপের কলকাবখানার সহিত আমাদের সনাতন প্রণালী এখন আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিয়া উঠিতে পারিতেছে না। সেই জন্য আমাদের দেশের প্রাচীন শিক্ষাপ্রণালীরও পরিবর্তনের প্রয়োজন হইয়া উঠিয়াছে। ইউরোপে যে প্রণালাতে হাতে-কলমে শিক্ষাদান হয়, এখন এ দেশেও সেই প্রণালীতে শিক্ষাদান আবশ্বক হইয়| উঠিয়াছে। কিন্তু হাতে কলমে শিক্ষার ও দ্য যে সকল সরঞ্জাম অবিশ্বক, তাহ আমাদের দেশে অদ্যাপি বর্তমান নাই । দেশের মধ্যে কলকারখানা নাই ; দেশের লোক অনভিজ্ঞতাবশত: নূতন কাজে হস্তক্ষেপ করিতে অসমর্থ ; মূলধনের একান্ত অভাব ; র্যাহাঁদের ধন আছে, তাহারা ত বিশ্বাস ও সাহসের অভাবে সেই ধনের ব্যবসায়ে নিয়োগে কুষ্ঠিত। বৈদেশিক রাজ দেশীয়দের সাহায্য করিতে একবারে পরাজুথ। এরূপ স্থলে হাতে কলমে শিক্ষার সুবিধামত বন্দোবস্ত হওয়া অসম্ভব। তাতে-কলমে শিক্ষা অত্যন্ত আবশ্বক, সন্দেহ নাই ; এবং দেশের ত্ৰিশ কোট অধিবাসীর ষাটি কোটিখানা হাত ও বর্তমান রহিয়াছে, কেবল কলমের অভাবে শিক্ষাট ঘটিয়া উঠিতেছে না। مسيو বর্তমান শিক্ষাপ্রণালীর যে সংস্কার ও সংশোধন আবশ্বক, তাহ রাজা ও প্রজা উভয় পক্ষ হইতেই একরকম স্বীকৃত হইয়াছে। আমাদেব মুসলমান ভ্রাতৃগণ সাৰ্ব্ব সৈয়দ আমেদের স্মৃতিস্থাপনা উল্লেখ করিয়া তাহার স্থাপিত আলিগড় কালেজকে স্বতন্ত্র মুসলমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করিবার চেষ্টা করিতেছেন। শ্ৰীমতী আনি বেসাপ্ত কাশীধামে হিন্দুর জাতীয় ভিত্তির উপর স্থাপিত হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত করিবার জন্য হিন্দুসমাজকে আহবান করিয়াছেন। বাঙ্গালার জমিদারগণের মূধ্যে এক সম্প্রদায় ভূস্বামিগণের উচ্চশিক্ষার জন্ত বিশ্ববিদ্যালয় হইতে স্বতন্ত্র বিদ্যালয় স্থাপনের সংকল্প করিতেছেন।
পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৭৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।