পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՎԶԵ օ রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র আমাদের দেশে ও ইংরাজের দেশে নিম্নশিক্ষার ব্যয়ভার গ্রহণ করিতে গবৰ্ণমেণ্ট ইতস্তত: করেন না। উচ্চশিক্ষার ভার গ্রহণ করিতে আমাদের গবর্ণমেণ্ট বড় রাজী নহেন, সেই ভারটার অংশ নিজের পক্ষে লাঘব করিয়া দেশের লোকের উপর ফেলিবাব জন্য গবর্ণমেণ্ট ব্যাকুল। বিলাতেও প্রাচীন কালের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ধনিসম্প্রদায়ের প্রদত্ত সম্পত্তি হইতে পালিত হইয় থাকে, এ সকলের উপর রাজার তেমন কর্তৃত্ব নাই। জাৰ্ম্মানি প্রভৃতি দেশে রাজা উচ্চশিক্ষার জন্য অকাতরে ব্যয় করিতে কুষ্ঠিত হন না। আমাদের দেশে গবর্ণমেণ্টও কুষ্ঠিত ; দেশের ধনিসম্প্রদায়েরও তেমন অবস্থা নহে যে, বর্তমান প্রণালীর উচ্চশিক্ষার গুরু ভার তাহার। সম্যকৃরূপে বহন করেন। কাজেই শিক্ষার্থগণের উপরেই ভারটা একবারে চাপিয়া পড়িতেছে। শিক্ষার্থগণের প্রদত্ত বেতনে শিক্ষাপ্রদান এ দেশে প্রায় নিয়ম হইতে চলিয়াছে । কিন্তু দরিদ্র দেশের দরিদ্র শিক্ষার্থীর ক্ষমতা যেরূপ, শিক্ষার ও অধ্যাপনার অবস্থাও একত্র তদনুযায়ী হইয়া পড়িতেছে। বিলাতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকের ছাত্রদিগের সঙ্গে বাস করেন ; উভয়ের মধ্যে জ্ঞানের বিনিময়ের সহিত ভাববিনিময় ও শ্রদ্ধা-ভক্তির বিনময় ঘটিয়া থাকে। এই বিষয়ে বিলাতী বিশ্ববিদ্যালয়গুলি অনেকাংশে আমাদের চতুষ্পাঠীর মত। এ দেশে আমরা বিলাত হইতে উচ্চশিক্ষার প্রণালী আনাইয়াছি ; কিন্তু তজ্জন্য যে ব্যয়ের প্রয়োজন, তাহার ভার লক্টতে কেহই প্রস্তুত নহে। গবর্ণমেণ্ট উচ্চশিক্ষার খরচ দিতে কুষ্ঠিত, ধনিসম্প্রদায় অক্ষমতার জুর করেন ; ছাত্রসম্প্রদায়ের ক্ষমতাব একান্ত অভাব। আমরা প্রাচীন শিক্ষাপ্রণালী পরিত্যাগ করিয়াছি ; বৈদেশিক প্রণালীর ব্যয়ভার গ্রহণ করিতেও প্রস্তুত নহি । আমাদের অবস্থা নিতান্তই অস্বাভাবিক। এই অস্বাভাবিকতাই আমাদের ব্যাধি। ফলও ঠিক তদন্ত্ররূপ হইতেছে। আমাদের মত দরিদ্রের পক্ষে ঐশ্বৰ্য্যশালীর অনুকরণ চেষ্টা বস্তুতই অস্বাভাবিক। হয়ত এই দারিদ্র্যই আমাদের সকল ব্যাধির মূল। সকলেই একবাক্যে স্বীকার করেন, আমরা দরিদ্র। রাজপুরুষেরাও বলেন, আমাদের দেশের চারি আন লোক প্রতি দিন অৰ্দ্ধাশনে যাপন করে। অথবা তাহদের স্বীকার না করিয়া উপায় নাই । এই সে দিন মাত্র ভারতের কোটি প্রজার অন্নসংস্থানের জন্য বৃটিশ সাম্রাজ্যের মহারাজীর প্রতিনিধি ভিক্ষার ঝুলি স্বন্ধে লইয়। "দেহি দেহি’ শব্দে পৃথিবীর লোকের দ্বারস্থ হইয়াছিলেন। বিগত দুভিক্ষের সমালোচনায় নিযুক্ত কমিশনের রিপোর্ট স্বাক্ষরিত না হইতেই পশ্চিম-ভারতে আবার রণবাদ্য বাজিয়া উঠিয়াছে ; আলাব বৃটিশ সিংহের চতুরঙ্গিণী সেনা দুভিক্ষ-দৈত্যের সহিত যুদ্ধ করিবার জন্য সাজ সাজ শবে আছুত হইয়াছে। ইহার উপর আর কথা নাই । আমাদের দারিদ্র্যব্যাবর’ উপশম করিতে পারিলে হয়ত অন্যান্য উপসর্গ আপন হইতে দূর হইতে পারিলে। সুতরাং এই দারিদ্র্যের কথাটা আমাদের বিশেষরূপে আলোচ্য। আলোচ্য বটে ; কিন্তু আলোচনা করিতে গেলেই আমার হৃৎকম্প উপস্থিত হয় । কেন না, দারিদ্র্যের কথা আনিতে গেলেই ‘পলিটিক্যাল ইকনমি' নামক একটা বিকট শাস্থের আশ্ৰয় লইতে হয়, এবং আমাকে কাতরভাবে স্বীকার করিতে হইতেছে যে, আপনাদের অমৃগৃহীত এই দীন প্রবন্ধপাঠক উক্ত শাস্ত্রের প্রতি কশ্বিন কালে