পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নানাকথা : সামাজিক ব্যাধি ও তাহার প্রতিকার Str? পূৰ্ব্বপিতামহেরা পরম যত্বে সঞ্চয় করিয়া রাখিয়া গিয়াছেন, তাহা এখন পুরাতন, জীর্ণ ও মলিন, সেই জন্য সেই সকল সামগ্রীতে আমাদের মন বসে না ; তাহাদের মালিন্য দূর করিতে, মরিচ সাফ করিতে আমাদের প্রবৃত্তি হয় না ; আমরা চাকচিক্যযুক্ত পরের দ্রব্য দেখিবা মাত্র মুগ্ধনেত্রে তাহার প্রতি চাহিতে থাকি এবং একটু অবসর পাইলেই তাহা আত্মসাৎ ও সিন্ধুকবদ্ধ করিবার চেষ্টা করি। কিন্তু আমরা মনে ভাবি না যে, পরের প্রব্যের প্রতি এরূপ অনুরাগ নীতিশাস্ত্রসম্মত নহে ও ইহার ফলে সেই দ্রব্যে আমাদের স্বামিত্ব কখনও স্বীকৃত হয় না, পরন্তু ধরা পড়িলেই কর্ণমর্দন লাভ ঘটে। কিন্তু চিরকাল মৰ্দ্দন লাভ করিয়া আমাদের কর্ণ দুইটাও যার-পর নাই সহিষ্ণু হইয়া পড়িয়াছে। o আমাদের মূল ব্যাধির একটা উৎকট উপসর্গ সম্প্রতি প্রকাশ পাইয়াছে। আমরা শক্তির অভাবে, অমুরাগের অভাবে, শ্রদ্ধর অভাবে, বুদ্ধির অভাবে, অভিজ্ঞতাঁর অভাবে সকল কাজেই হাত দিয়া বিফল প্রষত্ব হই ও অবশেষে পরস্পরকে গালি দিতে আরম্ভ করি। এই জার্তিকে গালি দেওয়া একালের লোকের একটা দারুণ ব্যাধি হইয়া পড়িয়াছে । আমরা প্রত্যেকেই ভাবি, আমি বড় বীর, কেবল আমার সঙ্গীদিগের কাপুরুষতাতেই লড়াইট ফতে হইল না। একটা সুবিধা বা অবসর পাইবা মাত্র আমরা প্লাটফৰ্ম্মে দাড়াইয়া বা খবরের কাগজে লিথিয়! আমাদের স্বজাতিকে গালি দিতে থাকি। যিনি ধৰ্ম্মসংস্কারক, তিনি উচ্চকণ্ঠে বলিতেছেন, আমি বড় ধাৰ্ম্মিক, আর তোমরা সকলে পাপপঙ্কে ডুবিয়া রহিয়াছ, ইহাতে ভারত-উদ্বার হইবে কিসে? ধিনি সমাজসংস্কারক, তিনি তারস্ববে চীৎকার করিতেছেন, আমি বড় সাহসী , আমি এই মাত্র আমার বৃদ্ধ পিতামহের পৈতা ছি'ডিয়া দিয়া আসিয়াছি, এবং বৃদ্ধ৷ পিতামহীর পাকা চুলে কলপ মাখাইয়া আসিতেছি, কেবল তোমাদেরই সৎসাহসের অভাবে ও কাপুরুষতায় আমরা সভ্যজগতে মুখ দেখাইতে পারিতেছি না। র্যাহার রাজদ্বারে কেরাণীগিরির দরখাস্ত গৃহীত হয় নাই, তিনি সংবাদপত্রে ঘোষণা করিতেছেন, দেশের শিক্ষিত সম্প্রদায় যত দিন কেবল চাকরীর জন্য ব্যস্ত থাকিবেন, তত দিন ভারতের কোন আশা নাই। যিনি বড় সাহেবের কানমলা খাইয়া অক্লেশে হজম করিয়াছেন, তিনি হুঙ্কার ছাড়িতেছেন, যত দিন তোমরা স্বদেশের জন্য ও স্বজাতির জন্য ধন প্রাণ সৰ্ব্বস্ব উৎসর্গ করিতে না পরিবে, তত দিন তোমাদের মল্লযুজন্ম অজাগলস্তনের ন্যায় নিরর্থক থাকিবে । যিনি আবার সমাজমধ্যে স্বনীতির অভাব দর্শনে ব্যথিতপ্রাণ, তিনি সকলের উপর গলা তুলিয়া বলিতেছেন, তোমরা চরিত্র উন্নত কর, চরিত্রবল ব্যতিরেকে তোমাদের সকল চেষ্টাই পগু হইবে। এই দৃপ্ত নিতান্ত মন্দ নয়। পরকে গালি দিলে নানা বিঘ্ন ঘটিবার সম্ভাবনা। এখন পীনাল কোডের নুতন ধার। আসিয়া সবেগে আপতিত হইতে পাবে। বিলাতী বুট সকল সময়ে পীনাল কোডের দীর্ঘস্থত্রিতা পছন্দ না করিয়া অন্যরূপ সরাসরি বিচারের ব্যবস্থা করে। এরূপ ক্ষেত্রে স্বজাতিকে গালি দেওয়াই সৰ্ব্বাপেক্ষ নিরাপৎ । বিশেষতঃ পরের নিকট বাহবা পাইবারও ইহাতে অনেকটা সম্ভাবনা আছে। গালাগালি পর্বের অভিনয়ের মত দর্শক হাসাইবার উপায় আর মাই ; এবং আমরা সংসারের রঙ্গমঞ্চে পরম্পরের প্রতি মুখ খিচাইয়া পরস্পরকে গালি দিয়া ষে বিকট অভিনয়ে প্রবৃত্ত