পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Woe রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র হইয়াছি, ইহাতে বিশ্বজগতের দশকবৃন্দের মধ্যে উৎকট হাস্যরসের অবতারণার সহিত যথেষ্ট করতালি লাভ হইবে, তাহাতে আর সংশয় কি ? শাস্ত্রে বলে, গৃহছিদ্র প্রকাশ করিতে নাই , কিন্তু আমরা আমাদের পুরাতন ঘরের চালে ও প্রাচীরে যেখানে যতগুলা ছিদ্র আছে, তাহার প্রত্যেককে লক্ষ্য করিয়া এক একটা দূরবীণ লাগাইয়া যত অনাত্মীয় অপরিচিত লোককে আমোদ দেখাইতেছি ও মনে করিতেছি আমরা কেমন সত্যনিষ্ঠ, আমরা কেমন উদার। আমি পরকে দেখাইতে চাই, আমি কত ভাল, আমি কত উদার, আমি কত সভ্য ; আর আমার সমস্থ আত্মীয় অতুচব প্রতিবেশী আমা হইতে কত নাচ, কত হেয়, কত অসভ্য । এইকপ উদাবতার নামান্তর আত্মদ্রোহ ও সমাজদ্রোহ, তাহা আমরা বুঝিতে পারি না । এই গালাগালি পর্বের্বর অভিনয়টা আমাদের সমাজে এখন সমারোহের সহিত চলিয়াছে। আমাদের ধনিসস্তানের বডসাহেবদের চবণের জন্য তৈলনিস্পীডনাথ সবেগে ঘানি চালাইতেছেন, আমরা গম্ভীবভাবে তাহাদিগকে গালি দিয়া থাকি। আমাদের সংস্কারকের সভ্যত ফলাইবার জন্য সমাজের যেখানে যাহা ক্ষত আছে, তাহা পরের নিকট উদঘাটিত করিয়া দেখাইতেছেন, আমরা তাহাদিগকেও গালি দিয়া থাকি । আমাদের ধৰ্ম্মধ্বজার। আপন আপন ধ্বজার নীচে দাড়াইয়া প্রতিবেশীকে পরকালের জন্য প্রস্তুত হইতে বলিতেছেন ও সঙ্গে সঙ্গে আপনার ইহকালেব বন্দোবস্ত পকিী করিয়া লইতেছেন, আমরা তাহাদিগকেও গালি দিয়া থাকি। আমাদের অধ্যাপক গোখলে মহাশয় বিধিবিড়ম্বনায় বিডম্বিত হইয়। রাজার নিকট বিনীতভাবে ক্ষমাভিক্ষ। করিলেন, আমরা তাহাকেও কাপুরুষতার জন্য ধিক্কার দিলাম, আমরা প্রত্যেকেই এক একট। বালগঙ্গাধর তিলক । অথচ আমাদের প্রত্যেক শ্রেণীর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের কাৰ্য্যই অস্বাভাবিক মূলে প্রতিষ্ঠিত বলিয়া নিষ্ফল হইয়া থাকে ও র্যাহারা গালি দেন. তাহাদেবও নৈতিক সাহস ও চরিত্রবল ও পুরুষকাব যে সমধিক উন্নত, তাহার কোন প্রমাণ এ পর্য্যন্ত উপস্থিত হয় নাই। ইহ। অপেক্ষ অস্বাভাবিক হাস্যকর দৃশু আর কি আছে ? আমার অনুগ্রাহক শ্রোতৃবর্গ হয়ত এতক্ষণ মনে মনে হাসিতেছেন ও বলিতেছেন, বৰ্ত্তমান প্রবন্ধপাঠক ও উপদেশের ছলে বেশ এক চোট গালি দিয়া লইলেন । প্রবন্ধপাঠকও দুনিয়ার বাহির হইতে চাহেন না, এবং বর্তমান কালের বাঙালী জাতির একমাত্র কাৰ্য্য বাদ দিলে প্রবন্ধের জন্য বিষয় পাওয়াই দুর্ঘট হইয় উঠে। যদি অস্তকার এই প্রহসনের অভিনয়ের পর-মুহূর্তেই আমাদের জাতীয় জীবনের এই অঙ্কে যবনিকাপতন হয়, তাহা হইলে আমি আপনাকে নিতান্ত সৌভাগ্যশীল জ্ঞান করিব। আমরা দুৰ্ব্বল, স্বতরাং বিশ্বজগতের সকলেরই আমাদিগকে গালি দিবার সম্পূর্ণ অধিকার রহিয়াছে, এবং তাহারা সেই অধিকারের সদ্ব্যবহারেও ক্রটি করেন বলিয়া বোধ হয় না । মেকলের মত মকর তিমিঙ্গিল হইতে ডেলী মেলের ষ্টীভেন্সের মত ফরফরায়মান শুক্ষরী পৰ্য্যন্ত সকলেই সেই অধিকারের সম্যক ব্যবহার করিয়া আসিয়াছেন। যখন লম্বাধ্যাপী কুটুম্ব সমাজ সকলেই আমাদিগুকে গালি দিতেছেন, তখন দিন কতক