পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নানাকথা : মহাকাব্যের লক্ষণ 8 > 。 তাহার জীবনটুকু দান করিতে অনুরোধ করিয়াছিলেন সত্য, কিন্তু তাহদেব লৌহবৰ্ম্মের অন্তরালে কারেনসি নোটেল গোছা লইয়া যাওয়া আবশ্বক প্রোধ করেন নাই। গত চারি হাজার বৎসরের মধ্যে মহুষ্যসমাজের বাহিরের মূৰ্ত্তিটা অনেক । পরিবত্তিত হইয়া গিয়াছে সত্য কথা, কিন্তু তাহার আভ্যস্তরিক প্রকৃতি । কতটা পরিবর্তন হইয়াছে, তাহ বলা দুষ্কর । মনুষ্যের বাহিরের পরিচ্ছদটা সম্প বদলাইয়াছে, কিন্তু মন্তস্থ্যের ভিতরের গঠন অনেকট একরূপই আছে। সেকালেব রাজারাজড়াও বোধ করি সময়মত কেীপীনধারী হইয়া সভামধ্যে বাহির হইতে লজ্জিত হইতেন না ; কিন্তু এখনকার অন্নহীন শ্রমজীবীরাও সমস্ত অঙ্গের মালিন্য ও বিরূপতা পোষাকের আচ্ছাদনে আবৃত রাখিতে বাধ্য হয়। সেকালে ক্রুরত। ছিল, বৰ্ব্বরতা ছিল, পাশবিকতা ছিল, এবং তাহ নিতান্ত নগ্ন, নিরাবরণ অবস্থাতেই ছিল । তাহার উপর কোনরূপ *আচ্ছাদন, কোনরূপ পালিশ, কোনরূপ রঙ ফলান ছিল না । একালে ও কুরতা, বর্বরতা ও পাশবিকত হয়ত ঠিক তেমনই বর্তমান আছে , তবে তাহার উপর একটা ক্লন্ত্রিম ভণ্ডামির আবরণ স্থাপিত হইয়া, তাহাব বীভৎস ভাবকে আচ্ছন্ন রাখিয়াছে । সম্প্রতি চীনদেশে সভ্য ইউরোপের সম্মিলিত সেন যে পরাক্রম প্রদর্শন কবিয়া - অসিয়াছে, তাহাণে আটলা ও জঙ্গিস খণর প্রেতাত্মার আর লজ্জিত হইবার কোন কারণই নাই । বস্তুতই চারি হাজার বৎসবের ইতিহাস সূক্ষ্মভাবে তলাইয়া দেখিলে বুঝা যায়, মনুষ্যচরিত্র অধিক বদলায় নাই ; তবে সমাজের মূৰ্ত্তিটা সম্পূর্ণ পরিবত্তিত হইয়। গিয়াছে । এবং মনুষ্যসমাজের অবস্থা যে কাব্যগ্রন্থে প্রতিফলিত হইয়া থাকে, সেই কাব্যের মূৰ্ত্তিও ষে তদনুসাবে পরিবত্তিত হইয়া যাইবে, তাহাতে বিস্ময়ের কারণ নাই। বিস্ময়ের কারণ থাক আর নাই থাক, আধুনিক কালের সাহিত্যে বাল্মীকি, ব্যাস ও হোমারের আর আবির্ভাব হয় নাই, এবং আর যে কখনও হইবে, তাহা আশা করাও দুষ্কর। সাহিত্যে মহাকাব্যের যুগ বোধ হয় অতীত হইয়া গিয়াছে। কালের যখন অবধি নাই ও পৃথ্বী যখন বিপুল, তখন বড় কবির ও বড় কাব্যের অসদ্ভাব কথন হইবে না, কিন্তু মনুষ্যসমাজের সেই প্রাচীন অবস্থা ফিরিয়া আসিবার যদি সম্ভাবনা না থাকে, তাহা হইলে মহাকবির ও মহাকাব্যের বোধ করি আবির্ভাব আর হইবে না। বস্তুতই আর আবির্ভাবের আশা নাই। মহাকাব্যের মধ্যে একটা উন্মুক্ত অকৃত্রিম স্বাভাবিকতা আছে, তাহা বোধ করি আর কখনও ফিরিয়া আসিষে না । সুনিপুণ শিল্পী একালে তাজমহল গড়িতে পারেন, কিন্তু পিরামিডের দিন বুঝি একবারে চলিয়। গিয়াছে। মহাকাব্যগুলিকে আমরা মহাকায় অদ্ভূত পিরামিডের সঙ্গে তুলনা করিতে পারি। এক একবার মনে হয়, উহাদিগকে কোন মানবহন্তুনিৰ্ম্মিত কৃত্রিম কারুকার্য্যের সহিত তুলনা না করিয়া প্রকৃতির হস্তনির্মিত নৈসর্গিক পদার্থের সহিত উপমিত করা উচিত । আমাদের ভারতবর্ষের মহাভারতকে এক একবার ভারতবর্ষের হিমাচলের সঙ্গে তুলনা করিতে ইচ্ছা হয়। হিমাচল যেমন তাহার বিপুল পাষাণ কলেবরের