পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 Հ8 রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র করিতে হইলে, যেন মহাকাব্য হইতে কতকটা দূরে থাকাই সঙ্গত। সেই সকল খণ্ড কাব্যের খণ্ড সৌন্দৰ্য্যকে চক্ষুর সম্মুখ হইতে সরাইয়া মহাকাব্যের বিশালায়তনের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করাই সঙ্গত। আমাদের মধ্যে অনেকেই মূল মহাকাব্য পড়েন নাই, কিন্তু সকলেই দূর হইতে সেই মহাকাব্য দেখিয়াছেন ; ভীষ্ম-দ্রোণ-কর্ণ-অশ্বখামার উন্নত চরিত্র হিমগিরিব উন্নত শৃঙ্গের ন্যায় দূর হইতে সকলেরই নেত্রগত হইয়াছে। তথাপি আমরা মহাকাব্যের মাহাত্ম্য বুঝিতে পারি। ইউরোপীয় সমালোচকদের অবস্থা অন্তরূপ। রামায়ণ মহাভারতের ইউরোপীয়গণের লিখিত সমালোচনা পডিয়া আমাদিগকে নিরাশ হইতে হয়। র্তাহারা আমাদের মত দূর হইতে নয়ন ভরিয়া মহাকাব্যের কাব্য-সৌন্দৰ্য্য দেখিতে পান নাই ; নিকটে গিয়াও সমগ্র মহাকাব্য অধ্যয়নের অবকাশ তাহাদের পক্ষে ঘটে না। বিশেষত পৰ্ব্বতে উঠিবার সময তাহার বন জঙ্গল, তাহার প্রস্তর কঙ্কর র্তাহাদিগকে ক্লাস্ত ও অবসন্ন করিয়া দেয়, তাহাদের ধৈর্য্য ও অধ্যৱসায় পরাস্ত হইয়া যায়। তবে যিনি সৌভাগ্যক্রমে কোন একটা প্রদেশের, কোন একটা অঙ্গের শোভাদর্শনে সফল হন, তিনি সেই শোভা বর্ণনা করিয়াই আপনার কাজ শেষ হইল, মনে করেন। মহাভারতের অন্তর্গত শকুন্তলাব উপাখ্যান, নলোপাখ্যান, সাবিত্রীর উপাখ্যান প্রভৃতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খণ্ড কাব্য সৌন্দর্য্যগৌরবে গরিষ্ঠ, সন্দেহ নাই ; ইউরোপীয় সমালোচকের ঐ সকল উপাখ্যানের প্রশংসা করেন। কিন্তু আমরা জানি, ঐ সকল খণ্ড কাব্যের যতই সৌন্দর্য্য থাক, মহাকাব্যের বিশাল সৌন্দর্য্যের নিকট তাহ স্থান পায় না। কিন্তু ইউরোপীয় সমালোচকের লেখনী এই সকল খণ্ড কাব্যের সমালোচনায় যেমন উদার হইয়া পড়ে, মূল মহাকাব্যের প্রশংসায় তেমন উদারভাব দেখাইতে পারে না। যাহা পড়িতে হয় না, তাহাই মহাকাব্য ; মহাকাব্যের এই লক্ষণ নির্দেশের অর্থ বোধ করি এত ক্ষণে অনেকটা স্পষ্ট হইয়া থাকিবে । মহাকাব্য না পড়িলে চলিতেও পারে ; কিন্তু যাহা মহাকাব্য নহে, তাহ না পড়িলে একেবারেই চলে না। কালিদাস খুব বড় কবি, হয়ত ব্যাস বাল্মীকি হইতেও বড় কবি ; কিন্তু তিনি মহাকাব্য লেখেন নাই। কুমারসম্ভব বুঝিতে হইলে তাহার গল্প শুনিলে চলিবে না, তাহার অনুবাদ পড়িলে চলিবে না ; তাহা হইলে মূল কুমারসম্ভব তন্ন তন্ন করিয়া স্কুলের ছাত্রের মত টীকাটিপ্পনী সহ পড়িতে হইবে । নহিলে কুমারসম্ভব পড়াই হইবে না। কালিদাসের ভাষা, কালিদাসের ছন্দ, কালিদাসের ধ্বনি, কালিদাসের নিকটে না গেলে শুনিতে পাইবে না ; দূর হইতে তাহার কিছুই বুঝিবে না। কালিদাস শিল্পী ; তিনি পাতরের উপর পাতর বসাইয়া সৌধ নিৰ্ম্মাণ করিয়াছেন, শাদা ধপধপে মাৰ্ব্বেলের ইটের উপর ইট বসাইয়। দেয়াল তুলিয়াছেন, সেই দেয়ালের গায়ে মণিমাণিক্য-রত্ন-প্রবালের লতাপাত কাটিয়া তাহাকে বিচিত্র শোভায় অলঙ্কত করিয়াছেন। তিনি তাজমহল গাথিয়াছেন, আলহাম্রা গাথিয়াছেন ; সেই সকল কারুশিল্পের শোভা দেখিতে হইলে নিকটে যাইতে হইবে ; সকলেও সে শোভা দেখিবে না ; সমজদারের চোখ লইয়া ও সমালোচকের রুচি লইয়। সেখানে যাইতে হইবে। নতুবা দেখিতে পাইবে না ও বুঝিতে পারিবে না। শেক্সপীয়র হয়ত আরও বড় কবি, তাহার স্থান হয়ত হোমারেরও অনেক উচ্চে, কিন্তু