রামেন্দ্রম্বন্দর রচনাসমগ্র לטא8 বিচারপ্রণালী কিঞ্চিৎ আশঙ্কাজনক । কাজেই পৌরাণিক বা তান্ত্রিক দেবতামাত্রকে অষ্টম শতাব্দীর পরবর্তী ধরিয়া লইয়া ষে বৈদিকগ্রন্থে তাহাদের উল্লেখ আছে, তাহাও অষ্টম শতাব্দীর পরবর্তী, এরূপ এক নিশ্বাসে নির্দেশ করিতে সাহস হয় না। বিশেষতঃ পুরাণের ও তন্ত্রের উৎপত্তি কোন সময়ে হইয়াছে, তাহারই যখন ঠিকানা নাই। পুরাণ বেদের সময়েও ছিল। আবার শুনা যায়, বোপদেবও পুরাণ রচন। করিয়াছিলেন। তান্ত্রিক আচারের প্রাদুর্ভাব হর্ষচরিতেও দেখি, আবার আকবর বাদশার আমলেও দেখি । “বৈশ্বানরায় বিদ্মহে লালীলায় ধীমহি তন্নে। অগ্নিঃ প্রচোদয়াং"—নারায়ণোপনিষদের এই মন্ত্রের লালীল’ নাম গণেশাথৰ্ব্বশীৰ্ষ হইতে গৃহীত হইতে পারে ; তাহার উণ্টাও হইতে পারে। সায়ণ যখন ঐ মস্ত্রের ভাস্থ্য দেন নাই, তখন উহাকে প্রক্ষিপ্ত ধরিয়াও নারায়ণোপনিষদের প্রাচীনত্ব বজায় থাকিতে পারে। আর গণেশোখৰ্ব্বশীর্ষেরই যখন তারিখ জানি না, তখন ঐ বিচার ও নিরর্থক। আকবরের আমলে জাল উপনিষৎ রচিত হইয়াছিল মানিলেও উপনিষৎ মাত্রই জাল হয় না। যে কয়খন উপনিষং শ্রীতিশাস্ত্রমধ্যে সৰ্ব্ববাদিসম্মতিক্রমে প্রবেশলাভ করিয়াছে, তাহার প্রাচীনত্ব সন্দেহেব পূৰ্ব্বে আরও পাক প্রমাণ আবশ্যক । শ্রীতিশাস্ত্রকে জাল হইতে রক্ষা করবার জন্য এ দেশে যেমন যত্ব হইয়াছিল, অন্য কোন দেশে কোন সময়ে কোন শাস্ত্রকে রক্ষা করিবার জন্য তেমন যত্ন হয় নাই। ইহা সাহেবলোকেরাও মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করেন। যে কোন ব্যক্তি একটা রচনা করিয়া উহাকে চতুরাননের মুখনিঃস্থত বলিয়া পরিচয় দিলেই তাহা শ্রতিবাক্য বলিয়া গৃহীত হইল না, যিনি প্রাচীন শাস্ত্রের কিছু সংবাদ রাখেন তিনিই ইহা বিশেষরূপে জানেন। জলি উপনিষৎ আজও রচিত হইতে পারে, কিন্তু উহা শ্রুতিবাক্য বলিয়া গণ্য হওয়া সহজ হইবে না । ফলে নারায়ণোপনিষৎ কত দিনের, তাহ যখন স্থির করিবার সম্প্রতি কোন উপায় দেখিতেছি না, এবং তৎসম্বন্ধে লেখক মহাশয়ের ও আমার মতে ভেদ যৎসামান্য, তখন এ বিষয়ে বিতণ্ডার প্রয়োজন নাই । তবে একটা কথা বক্তব্য আছে। পাশ্চাত্ত্য পণ্ডিতদের ভারতবর্ষ-ঘটিত পুরাতত্বের বিচারে অবলম্বিত প্রণালীট কতকটা এইরূপ —ধরিয়া লও, পলাশীর লড়াইয়ের পূৰ্ব্বে ভারতবর্ষে কিছুই ছিল না ; যিনি বলিতে চাহেন, অমুক জিনিসটা তৎপূৰ্ব্বে ছিল, প্রমাণের ভার তাহার উপর। এই বিষম ভার মাথায় লইয়া পুরাতত্ত্বব্যবসায়ীকে কিছু দূর চলিয়াই ক্লান্ত হইয়া থামিতে হয়। আবুলফজল, আলবিরুনি, ফাহিয়াং, মেগাস্থিনিস পর্য্যন্ত অতিকষ্টে ঠেলিয়াই সেইখানে থামিতে হয়। কেন না, মহাভারতে উল্লেখ আছে বলিতে গেলেই মহাভারত বা বেদ পলাশীর লড়াইয়ের পূৰ্ব্বে ছিল কি না, এই আর একটা নূতন বোঝ। মাথায় চাপে। এই প্রণালীটা বোল আনা বৈজ্ঞানিক, এবং এতদ্বারা প্রাপ্ত সিদ্ধান্তও খুব পাকা হয়, সন্দেহ নাই। কিন্তু সে
পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৭০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।