আজকালকার পরিকৃ উদ্যোগ ნაჯyi9 পথে চলিয়া গোড়ায় পৌছিতে পারিয়াছি, এরূপ শপথে কিছু বেশী মাত্রায় সাহস আবখ্যক হয় । ( ‘বঙ্গদর্শন, চৈত্র ১৩১০ ) আজকালকার পব্লিক, উদ্যোগগুলির সঙ্গে প্রাকৃতসাধারণের যোগরক্ষার উপায় কি ? শিক্ষিত সমাজের আন্দোলন অধিকাংশই রাজনীতি-ঘটিত । ইহার সহিত অশিক্ষিত জনসাধারণের সম্পর্ক ঘটান এখন সহজ বোধ হয় না। বিবিধ খবরের কাগজ আজকাল এই জনসাধারণের মধ্যে প্রচার লাভ করিতেছে। কিন্তু যাহারা নিজে প্লডিতে জানে না, অপরের পড়া শুনে মাত্র, তাহাদের নিকট ছাপা কাগজের বাক্য দৈববাণী-স্বরূপ। তাহারা মুগ্ধ হইয়া শোনে, সব কথা বুঝিত্বে পারে না এবং নিজের যে কোন কৰ্ত্তব্য আছে, সে কথা তাহাদের মনেই উঠে না। ফলকথা, ভারতবর্ষ বলিয়া একটা বৃহৎ দেশ আছে, তাহা আমাদের দেশ ; সেই বৃহৎ দেশে যে যেখানে বাস করে, সে আমাদের জাতিভাই, তাহার সুখদুঃখে আমাদের বেদনা দেখান আবশ্বক, এই বৃহৎ দেশের ভাগ্যবিধান যে রাজার হাতে, তাহাকে কোনরূপে ধরা পাকড করা উচিত, এ জ্ঞানটাই জনসাধারণের মধ্যে এখনও জন্মায় নাই। শিক্ষিতের মধ্যেই যে জন্মিয়াছে, ইহা ষোল আন সত্য নহে। এই জ্ঞানটা যত দিন ন হইতেছে--সঙ্কীর্ণতা, গ্রামিকতা ও সামাজিকতা ছাড়িয় একটা বৃহৎ দেশের ও বৃহৎ জাতির সহিত সম্পর্কজ্ঞান যত দিন না জন্মিতেছে, তত দিন শিক্ষিতের রাজনৈতিক আন্দোলনে অশিক্ষিতে যোগ যোগ দিবে না ও শিক্ষিতের ভাষাও অশিক্ষিতে বুঝিবে না। কিছু দিন পূর্বে ঝিকরগাছায় এক বৃহৎ মেলা ডাকিয়া শিক্ষিতের সহিত অশিক্ষিতের যোগ-ঘটনার চেষ্টা হইয়াছিল। ঐরূপ মেলার সহিত নানারূপ তামাস যোগ করিলে অনেক লোক জুটিতে পারে, এবং উহা দ্বারা লোকশিক্ষার নানাকাজ হইতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্রনৈতিক শিক্ষা চলিবে বলিয়া বোধ হয় না। প্রথমতঃ, বৃহৎ জনসভার মধ্যে রাজনৈতিক বক্তৃতা করিতে গেলে গবৰ্ণমেণ্ট আতঙ্কিত হইবার সম্ভব ; তাহা হইলে অচিরে উহার মূলোচ্ছেদের আশঙ্কা। দ্বিতীয়তঃ, রাজনীতির তত্ত্ব জনসাধারণকে তাহাদের বোধগম্য ভাষায় বুঝাইতে গেলে অনেক বড় কথাকে ছোট করিতে হইবে, ছোট কথাকে বড় করিতে হইবে, আসল কথাকে বিকৃত—যা নয়, তা বলিতে হইবে ও অমূলক অস্বাভাবিক আতঙ্কের স্বষ্টি করা হইবে। উহ। রাজা প্রজা, উভয়েরই পক্ষে মঙ্গলজনক নহে । আমার বিবেচনায় এখন সাহিত্যের দিকৃ দিয়া সমাজের উপরে ও নীচের স্তরে যোগের চেষ্টা আবশ্বক, এবং অভিনব সাহিত্য স্বষ্টি করিয়া শিক্ষিতের মুখের বড় বড় কথা অশিক্ষিতের মধ্যে প্রচার করা আবশ্বক। বঙ্গভাষার প্রাচীন সাহিত্য, শিক্ষিত ও অশিক্ষিত, উভয়ের সাধারণ সম্পত্তি ছিল । আধুনিকু সাহিত্য কেবল শিক্ষিতের জন্য, অশিক্ষিত উহার ভাষাও বুঝে না, উহার ভাবও হৃদগন্তু করিতে পারে না। এমন সাহিত্য চাই, যাহার ঘূর জাতীয় ভাব ও রাষ্ট্রয় ভাব অশিক্ষিতের মধ্যে জন্মাইতে হইবে।
পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৭১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।