পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্যাধি ও প্রতিকার 8b" রবিবাবু এই কথাটা ঘোষণা করিতেছিলেন ; এবং বঙ্গ বিভাগের কিছু দিন পূৰ্ব্ব হইতে র্তাহার কণ্ঠস্বর অত্যন্ত উচ্চ ও অত্যন্ত তীব্র হইয়া মুহুম্মুহুঃ ঐ কথা আমাদের কানে প্রবেশ করাইতেছিল। অকস্মাৎ বঙ্গবিভাগের ধাক্কা পাইয়। বাঙ্গালার শিক্ষিত সমাজ প্রায় একবাক্যে কোলাহল করিয়া বলিয়া উঠিল— না, আমরা আর ইংরেজের কাছে ঘোষিব না, উহাদের ছায়। স্পর্শ করিব না, উহাদের ভিক্ষা গ্রহণ করিব না। আমরা এখন বুঝিলাম যে, ইংরেজ তোষামোদের কেহ নয় ; কেহ ভাবিলেন, ইংরেজকে ভয় দেখাইয়া বরং কিছু আদায় হইতে পারে ; অন্যে বলিলেন, ভয় দেখানর প্রয়োজন নাই ; ষেটুকু পার, নিজে কর, ইংরেজের নিকট কাঙালের মত হাত পাতিওঁ না। এইরূপে একরুকমেরই কথ। আমরা পাজ জনে পাচ রকমে ঘোরাইয়া সাজাইয়া বলিতে আরম্ভ করিয়াছিলাম । মামাদের মধ্যে কাহারও ছিল আস্ফালন বেশী, কাহারও ছিল ডিপ্লোমাসি বেশী। আমরা দল বাধিয়া “স্বদেশী" হইয়া পডিলাম। বঙ্গবিভাগের পূৰ্ব্বে আমাদের সমুদয় চেষ্টা ছিল ইংরেজের রাষ্ট্রনীতিব অভিমুখে, পরে চেষ্টা দাড়াইল পরায়ুখে। স্বদেশীব আগুন যখন জলিয়া উঠিয়াছিল, তখন রবীন্দ্রনাথের লেখনী তাহাতে ৰাতাস দিতে ক্রটি করে নাই। বেশ মনে আছে, ৩০শে আশ্বিনের পূৰ্ব্ব হইতে হথায় হস্তায় তাহার এক একটা নূতন গান বা কবিতা বাহির হইত, আর আমাদের স্বায়ুতন্ত্ৰ কঁপিয়| আর নাচিয়| উঠিত। নিস্ফল ও অনাবশ্বক আস্ফালনে তিনি কখনই উপদেশ দেন নাই ; কিন্তু সে সময়টায় যে উত্তেজনা ও উন্মাদনা ঘটিয়াছিল, তাহার জন্য রবীন্দ্রনাথের ক্লতিত্ব নিতান্ত অম ছিল না। উত্তেজনার বশে আমরা দুই বৎসর ধরিয়া ইংবেজের অনুগ্রহ লইব না, ইংরেজের শাসনযন্ত্র অচল করিয়| দিব বলিয়া লাফালাফি করিয়া আসিতেছি ; এবং ইংরেজ রাজা যখন সেই লাফালাফিতে ধৈৰ্য্যভ্রষ্ট হইয়া লগুড তুলিয়। আমাদের গলা চাপিয়া ধরিয়াছেন, তখন আমাদের সেই অস্বাভাবিক আস্ফালনের নিস্ফলতা দর্শনে ব্যথিত হইয়া রবীন্দ্রনাথ বলিতেছেন—ও পথে চলিলে হইবে না–মাতামাতি লাফালাফির কৰ্ম্ম নহে, নীরবে ধীরভাবে কাজ করিতে হইবে। কাজ করিতে হইবে—এই কথাটা নূতন নহে। আমাদের আস্ফালনের ও চীৎকারের মাত্রা যখন চরমে উঠিয়াছিল, তখনও এক দল—যাহারা বিজ্ঞের দল বলিয়া পরিচিত, তাহারা কেবলই বলিতেছিলেন—চীৎকার ছাড়, কাজ কর। দুঃখের বিষয় এই যে, তাহারাও “কাজ কর,” “কাজ কর” বলিয়া চীৎকার করিয়| কেবল চীৎকারের পরিমাণই বাড়াইতেছিলেন, উপদেশের পরিবর্তে র্তাহারা স্বয়ং কিঞ্চিৎ কাজ করিলে আমরা একটা কৰ্ত্তব্যের আদর্শ দেখিতে পাইতাম, দেশও উপকৃত হইত। এ পক্ষ হইতে বলা হইতেছিল, কেন—আমরা কি কেবলই চেঁচাইতেছি ? কাজ কি কিছুই করিতেছি না ? শ্রাবণের ‘প্রবাসী’রই “কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য” প্রবন্ধে সাক্ষ্য দিতেছে, আমরা এক বৎসরে ভারতে আমদানি কাপড়ের মূল্য (৩৯) কোটি টাকা হইতে ৩৭ কোটি টাকায় নামাইয়াছি, ইহা কি কাজ নহে? অার এই ষে বঙ্গলক্ষ্মী মিল, শিক্ষা-পরিষৎ, টেকনিক্যাল ইন্‌ষ্টটুট ইত্যাদি, এ সকল কি কাজ নহে?