পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՊՀց রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র চলিবার উপায় নাই। কাজেই পণ্ডিতে পণ্ডিতে সদাই দ্বন্দ্বের সম্ভাবনা থাকিয়া যায়। সংস্কৃত দু হিত । শব্দ স্পষ্টতঃ দোহনার্থক দু হ, ধাতু হইতে উৎপন্ন ; যে দে f হন করে, সেই দুহিতা। আমাদের ভট্টাচাৰ্য্য পণ্ডিত বলিবেন, কন্যা পিতার ধনসম্পত্তি দোহন করেন, সেই জন্য তিনি দুহিত। পাশ্চাত্য শাবিক বলিবেন ঐ শব্দটি যখন ইংরেজীতেও daughterরূপে বিদ্যমান দেখিতেছি, তখন উহ! প্রাচীন আর্য্যজাতির ভাষাতেও ছিল ; নিশ্চয় সেকালে কন্যাব উপর গো-দোহনের ভার অপিত ছিল ; যিনি সেকালে গাভী দোহন করিতেন, তিনিই দুহিতা । বলা বাহুল্য, উভয় স্থলেই দুহিতা শব্দের তাৎপৰ্য্য নিরূপণে কল্পনার খেলা চলিয়াছে । 象 আর একটি দুষ্টান্ত দিব । সংস্কৃত ত্রি শব্দ, বাঙ্গালায় যাহা তিন, ইংরেজীতে উহ! three, লাটনে উহা tri ; বলা বাহুল্য, উহা প্রাচীন আৰ্য্যভাষায় বৰ্ত্তমান ছিল। শাবিদক পণ্ডিত সেইস লিখিয়াছেন, লাটিন trans, ইংরেজী through, সংস্কৃত তরণ, তরণি প্রভৃতি শব্দের সহিত উহাব সম্পর্ক আছে। সংস্কৃত তু, ধাতু ঐ সকল শব্দের মূলে বিদ্যমান। সস্থত ত, ধাতুর অর্থ পার হওয়া, অর্থাৎ উত্তীর্ণ হওয়া । পণ্ডিত মহাশয় বলেন, অতি প্রাচীন কালে আর্য্যেবা এক ও দুই, ইহার উপরে গণিতে পারিতেন না , তাহাদের গণনার শক্তি ঐ সীমায় আবদ্ধ ছিল ; ঐ সীমা যে দিন উত্তীর্ণ হইলেন ও তিন গণিতে পারিলেন, সেই দিন বলিলেন, “এই পার হইলাম,” অর্থাৎ দুই সংখ্যা পার হইয় তাহার পরবর্তী সংখ্যায় আসিলাম। এইরূপে তু, ধাতু হইতে ত্রি অর্থাৎ তিন শব্দের স্বষ্টি হইল। তিনের পর চারি ; সংস্কৃত চ ত্বা রি=চ+ত্রি , চ শব্দের সংস্কৃতে অর্থ “আরও” অর্থাৎ আর একটা ; চত্বারি অর্থে তিনের উপর আর একটা । এই সকল দুষ্টান্তে পণ্ডিতদের কল্পনা কষ্টকল্পনা হইয়াছে কি না, সে বিষয়ে নানা জনের নানা মত হইবে। ফলে ভাষাবিজ্ঞানশাস্ত্রে এইরূপ কল্পনা ও কষ্টকল্পনার আশ্রয় ভিন্ন গত্যন্তর নাই। আমার বর্তমান প্রবন্ধেও যে কল্পনার সাহায্য লইয়া অনেক শব্দের তাৎপৰ্য্য জোরপূর্বক আনা হয় নাই, তাহ বলিতে পারিব না। তবে এই কল্পনার খেলার মধ্যে ও কিছু-না-কিছু সত্যের ভিত্তি থাকিতে পারে, এই ভরসায় এই প্রসঙ্গের উত্থাপনে সাহসী হইয়াছি। বহু স্থলে আমার অজ্ঞতা ও অনবধানহেতু সংস্কৃত, আবী ও ফাসী প্রভৃতি মূল হইতে উৎপন্ন শব্দকে ধ্বনিমূলক দেশজ শব্দ বলিয়া হয়ত গ্রহণ করিয়াছি ; এরূপ ভ্রমপ্রমাদ এই প্রবন্ধমধ্যে বহুসংখ্যায় আবিষ্কৃত হইলেও বিস্মিত হইব না। পরিশেষে একটি কথা বলা আবখ্যক । খাটি বাঙ্গাল শব্দের বানানে এখনও কোন বঁধ নিয়ম নাই। মনস্বী অধ্যাপক যোগেশচন্দ্র রায় তাহার শব্দকোষে সম্প্রতি নিয়ম বাধার চেষ্টা করিয়াছেন ; এই বোধ করি প্রথম চেষ্টা । আমি এই প্রবন্ধে বানানের সামঞ্জস্য রাখিতে পারি নাই। অধিকাংশ শব্দের উচ্চারণ প্রদেশভেদে ভিন্ন ; আমি উত্তর-রাঢ়ের অধিবাসী ; আমার বানানে, বিশেষতঃ র’ ও ড়’ এই দুই বর্ণের প্রয়োগে, উত্তর-রাঢ়ের বিশিষ্ট উসারণ—রেচো উচ্চারণ, হয়ত বহু স্থলে আসিয়া পড়িয়াছে। পাঠক মহাশয় দয়া করিয়া সংশোধন করিয়া লইবেন।