পাতা:রাশিয়ার চিঠি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ভাবটা এই যে, বাহির থেকে যে শােষণ চলছে তা দুঃসহ হত না যদি স্বল্প অন্ন নিয়ে স্বল্প লােকে হাঁড়ি চেঁচেপুছে খেত। শুনতে পাই ইংলণ্ডে ১৮৭১ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ১৯২১ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে শতকরা ৬৬ সংখ্যা হারে প্রজাবৃদ্ধি হয়েছে। ভারতবর্ষে পঞ্চাশ বৎসরের প্রজাবৃদ্ধির হার শতকরা তবে এক যাত্রায় পৃথক ফল হল কেন। অতএব দেখা যাচ্ছে root cause প্রজাবৃদ্ধি নয়, root cause অন্নসংস্থানের অভাব। তারও root কোথায়?

 দেশ যারা শাসন করছে, আর যে-প্রজারা শাস্তি হচ্ছে তাদের ভাগ্য যদি এককক্ষবর্তী হয় তাহলে অন্তত অন্নের দিক থেকে নালিশের কথা থাকে না, অর্থাৎ সুভিক্ষে দুর্ভিক্ষে উভয়ের ভাগ প্রায় সমান হয়ে থাকে। কিন্তু যেখানে কৃষ্ণপক্ষ ও শুক্লপক্ষের মাঝখানে মহালােভ ও মহাসমুদ্রের ব্যবধান সেখানে অমাবস্যার তরফে বিদ্যাস্বাস্থ্য-সম্মানসম্পদের কৃপণতা ঘুচতে চায় না, অথচ নিশীথ রাত্রির চৌকিদারদের হাতে বৃষচক্ষু লণ্ঠনের আয়ােজন বেড়ে চলে। এ-কথা হিসাব করে দেখতে স্ট্যাটিস্টিকসের খুব বেশি খিটিমিটির দরকার হয় না, আজ এক-শ ষাট বৎসর ধরে ভারতের পক্ষে সর্ববিষয়ে দারিদ্র্য ও ব্রিটেনের পক্ষে সর্ববিষয়ে ঐশ্বর্য পিঠোপিঠি সংলগ্ন হয়ে আছে। এর যদি একটি সম্পূর্ণ ছবি আঁকতে চাই তবে বাংলাদেশে যে-চাষী পাট উৎপন্ন করে আর সুদূর ডাণ্ডিতে যারা তার মুনফা ভােগ করে উভয়ের জীবনযাত্রার দৃশ্য পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে দেখতে হয়। উভয়ের মধ্যে যোগ আছে লােভের, বিচ্ছেদ আছে ভােগের, এই বিভাগ দেড়-শ বছরে বাড়ল বই কমল না।

 যান্ত্রিক উপায়ে অর্থলােভকে যখন থেকে বহুগুণীকৃত করা সম্ভবপর হল তখন থেকে মধ্যযুগের শিভালরি অর্থাৎ বীরধর্ম বণিকধর্মে দীক্ষিত

৯৩