পাতা:রাশিয়ার চিঠি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তারা উৎপাতকে বিশ্বাস করে; অবশেষে লাঠিয়ে পিটিয়ে রাতারাতি যা গড়ে তােলে তার উপরে ভরসা রাখা চলে না, তার উপরে দীর্ঘকালের তর সয় না।

 যেখানে মানুষ তৈরি নেই, মত তৈরি হয়েছে, সেখানকার উচ্চণ্ড দণ্ডনায়কদের আমি বিশ্বাস করি নে। প্রথম কারণ, নিজের মত সম্বন্ধে আগেভাগে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করা সুবুদ্ধি নয়, সেটাকে কাজে খাটাতে খাটাতে তবে তার পরিচয় হয়। ওদিকে ধর্মতন্ত্রের বেলায় যে-জননায়কেরা শাস্ত্রবাক্য মানে না, তারাই দেখি, অর্থতন্ত্রের দিকে শাস্ত্র মেনে অচল হয়ে বসে আছে। সেই শাস্ত্রের সঙ্গে যেমন করে থােক মানুষকে টুঁটি চেপে ঝুঁটি ধরে মেলাতে চায়—এ-কথাও বােঝে না, জোর করে ঠেসে-ঠুসে যদি কোনো এক রকমে মেলানো হয় তাতে সত্যের প্রমাণ হয় না, বস্তুত যে-পরিমাণেই জোর সেই পরিমাণেই সত্যের অপ্রমাণ।

 য়ুরােপে যখন খ্রীষ্টান শাস্ত্রবাক্যে জবরদস্ত বিশ্বাস ছিল তখন মানুষের হাড়গোড় ভেঙে, তাকে পুড়িয়ে বিঁধিয়ে, তাকে ঢিলিয়ে ধর্মের সত্যপ্রমাণের চেষ্টা দেখা গিয়েছিল। আজ বলশেভিক মতবাদ সম্বন্ধে তার বন্ধু ও শত্রু উভয় পক্ষেরই সেইরকম উদ্দাম গায়ের-জোরী যুক্তি-প্রয়ােগ। দুই পক্ষেরই পরস্পরের নামে নালিশ এই যে, মানুষের মতস্বাতন্ত্র্যের অধিকারকে পীড়িত করা হচ্ছে। মাঝের থেকে পশ্চিম মহাদেশে আজ মানবপ্রকৃতি দুই তরফ থেকেই ঢেলা খেয়ে মরছে। আমার মনে পড়ছে আমাদের বাউলের গান—

নিঠুর গরজী,
তুই কি মানসমুকুল ভাজবি আগুনে।
তুই ফুল ফুটাবি, বাস ছুটাবি সবুর বিহুনে।

১০৬