পাতা:রাশিয়ার চিঠি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

থেকে সংগ্রহ করে এনেছেন, দেশের মানুষকে তাঁরা অন্তরের মধ্যে উপলব্ধি করেন না। এই রকম মনােবৃত্তির সুবিধে হচ্ছে এই যে, আমাদের দেশ আছে বিদেশীর হাতে এই কথা নিয়ে আক্ষেপ করা, উত্তেজিত হওয়া, কবিতা লেখা, খবরের কাগজ চালানাে সহজ, কিন্তু দেশের লােক আমাদের আপন লােক, এ-কথা বলবামাত্র তার দায়িত্ব তখন থেকেই স্বীকার করে নিতে হয়, কাজ শুরু হয় সেই মুহূর্তে।

 সেদিনকার পরেও অনেক দিন চলে গেল। সেই পাবনা কনফারেন্সে পল্লীসম্বন্ধে যা বলেছিলুম তার প্রতিধ্বনি অনেকবার শুনেছি—শুধু শব্দ নয় পল্লীর হিতকল্পে অর্থ সংগ্রহ হয়েছে—কিন্তু দেশের যে-উপরিতলায় শব্দের আবৃত্তি হয় সেইখানটাতেই সেই অর্থও আবর্তিত হয়ে বিলুপ্ত হয়েছে, সমাজের যে গভীরতলায় পল্লী তলিয়ে আছে সেখানে তার কিছুই পৌঁছল না।

 একদা আমি পদ্মার চরে বােট বেঁধে সাহিত্যচর্চা করেছিলুম। মনে ধারণা ছিল, লেখনী দিয়ে ভাবের খনি খনন করব এই আমার একমাত্র কাজ, আর কোন কাজের আমি যােগ্যই নই। কিন্তু যখন এ-কথা কাউকে বলে-কয়ে বােঝাতে পারলুম না যে, আমাদের স্বায়ত্তশাসনের ক্ষেত্র হচ্ছে কৃষিপল্লীতে, তার চর্চা আজ থেকেই শুরু করা চাই, তখন কিছুক্ষণের জন্যে কলম কানে গুঁজে এ-কথা,আমাকে বলতে হল—আচ্ছা, আমিই এ-কাজে লাগব। এই সংকল্পে আমার সহায়তা করবার জন্যে সেদিন একটি মাত্র লােক পেয়েছিলুম, সে হচ্ছে কালীমােহন। শরীর তার রােগে জীর্ণ, দু-বেলা তার জ্বর আসে, তার উপরে পুলিসের খাতায়, তার নাম উঠেছে।

 তারপর থেকে দুর্গম বন্ধুর পথে সামান্য পাথেয় নিয়ে চলেছে সেই ইতিহাস। চাষীকে আত্মশক্তিতে দৃঢ় করে তুলতে হবে এই ছিল আমার

১৭