পাতা:রাশিয়ার চিঠি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তোলবার কাজে লাগতে পেরেছে, বাইরের উপকরণের অভাব সত্ত্বেও।

 কাজ সামান্য নয়— য়ুরোপ-এশিয়া জুড়ে প্রকাণ্ড এদের রাষ্ট্রক্ষেত্র। প্রজামণ্ডলীর মধ্যে যত বিভিন্ন জাতের মানুষ আছে, ভারতবর্ষেও এত নেই। তাদের ভূপ্রকৃতি মানরপ্রকৃতির মধ্যে পরস্পর পার্থক্য অনেক বেশি। বস্তুত এদের সমস্যা বহুবিচিত্র জাতি-সমাকীর্ণ, বহুবিচিত্র অবস্থা-সংকুল বিশ্বপৃথিবীর সমস্যারই সংক্ষিপ্ত রূপ।

 তোমাকে পূর্বেই বলেছি বাহির থেকে মস্কৌ শহর যখন চোখে পড়ল দেখলুম য়ুরোপের অন্য সমস্ত ধনী শহরের তুলনায় অত্যন্ত মলিন। রাস্তায় যারা চলেছে তারা একজনও শৌখিন নয়,সমস্ত শহর আটপৌরে কাপড়-পর। আটপৌরে কাপড়ে শ্রেণীভেদ থাকে না, শ্রেণীভেদ পোশকী কাপড়ে। এখানে সাজে পরিচ্ছদে সবাই এক। সবটা মিলেই শ্রমিকদের পাড়া—যেখানে দৃষ্টি পড়ে সেইখানেই ওরা। এখানে শ্রমিকদের কৃষাণদের কী রকম বদল হয়েছে তা দেখবার জন্যে লাইব্রেরিতে গিয়ে বই খুলতে অথবা গাঁয়ে কিংবা বস্তিতে গিয়ে নোট নিতে হয় না। যাদের আমরা ‘ভদ্দর লোক ’বলে থাকি তারা কোথায় সেইটেই জিজ্ঞাস্য।

 এখানকার জনসাধারণ ভদ্রলোকের আওতায় একটুও ছায়াঢাকা পড়ে নেই, যারা যুগে যুগে নেপথ্যে ছিল তারা আজ সম্পূর্ণ প্রকাশ্যে। এরা যে প্রথম ভাগ শিশুশিক্ষা পড়ে কেবলমাত্র ছাপার অক্ষর হাতড়ে বেড়াতে শিখেছে এ-ভুল ভাঙতে একটুও দেরি হল না। এরা মানুষ হয়ে উঠেছে এই কটা বছরেই।

 নিজের দেশের চাষীদের মজুরদের কথা মনে পড়ল। আরব্য উপন্যাসের জাদুকরের কীর্তি। বছর দশেক আগেই এরা মনে হল

২২