পাতা:রাশিয়ার চিঠি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৯৩১).pdf/২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাশিয়ার চিঠি
১১

আহার-বিহার ও সকল প্রকার উপকরণ যা ছিল তা দেখ্‌লে এখনকার সাধারণ মধ্যবিত্ত লোকদের মনেও অবজ্ঞা জাগতে পার্‌তো।

 ধনগত বৈষম্যের বড়াই আমাদের দেশে এসেচে পশ্চিম মহাদেশ থেকে। এক সময়ে আমাদের দেশে যখন হাল আমলের আপিসবিহারী ও ব্যবসাদারদের ঘরে নতুন টাকার আমদানি হ’লো, তখন তা’রা বিলিতী বাবুগিরির চলন সুরু ক’রে দিলে। তখন থেকে আসবাবের মাপেই ভদ্রতার পরিমাপ আরম্ভ হ’য়েচে। তাই আমাদের দেশেও আজকাল কুলশীল রীতিনীতি বুদ্ধিবিদ্যা সমস্ত ছাপিয়ে চোখে পড়ে ধনের বিশিষ্টতা। এই বিশিষ্টতার গৌরবই মানুষের পক্ষে সব চেয়ে অগৌরব। এরই ইতরতা যাতে মজ্জার মধ্যে প্রবেশ না করে, সেজন্যে বিশেষ সাবধান হওয়া উচিত।

 এখানে এসে যেটা সব চেয়ে আমার চোখে ভালো লেগেচে সে হ’চ্চে এই ধন-গরিমার ইতরতার সম্পূর্ণ তিরোভাব। কেবলমাত্র এই কারণেই এদেশে জনসাধারণের আত্মমধ্যাদা এক মুহুর্তে অবারিত হ’য়েচে। চাষাভূষো সকলেই আজ অসম্মানের বোঝা ঝেড়ে ফেলে মাথা তুলে দাঁড়াতে পেরেছে।