পাতা:রাষ্ট্র ও বিপ্লব — ভি. আই. লেনিন.pdf/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
প্রথম অধ্যায়: শ্রেণী-বিভক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র

সূক্ষ্ম ধরনের। রাষ্ট্র হইতেছে শ্রেশীগত শাসনের যন্ত্র, এবং বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে পারস্পরিক বিরোধ আপসে মীমাংসা করা যায় না—‘তত্ত্বের দিক হইতে?’ তাহারা একথা অস্বীকার করে না; কিন্তু যে-বিষয়টি তাহারা ভুলিয়া যায় বা উপেক্ষা করে, তাহা হইল এই: মীমাংসার অতীত যে শ্রেণী-বিরোধ, তাহারই ফলে যদি রাষ্ট্রের উদ্ভব হইয়া থাকে, রাষ্ট্র যদি সমাজের উর্দ্ধে অবস্থিত এক শক্তি হয় যে-শক্তি ‘সমাজ হইতে নিজেকে ক্রমশই বিচ্ছিন্ন করিয়া লইতেছে’ তাহা হইলে স্পষ্টই বুঝা যায় যে, একটা সশস্ত্র বিপ্লব ব্যতিরেকে নিপীড়িত শ্রেণীর মুক্তিলাভ সম্ভব নয়; শুধু তাহা-ই নয়—শাসক শ্রেণী রাষ্ট্রশক্তির যে-যন্ত্র তৈয়ার করিয়াছে এবং যাহার মধ্যে এই ‘বিচ্ছেদ’ মূর্ত রূপ পরিগ্রহ করিয়াছে, সেই যন্ত্রের ধ্বংস ব্যতিরেকেও নিপীড়িত শেণীর মুক্তি সম্ভব নয়। আমরা পরে দেখিব যে, বিপ্লবের বিভিন্ন সমস্যা ঐতিহাসিক দিক হইতে মূর্ত রূপে বিশ্লেষণ করিয়া মার্ক্‌স এই সিদ্ধান্তে পৌঁছিয়াছিলেন এবং তত্ত্বের দিক হইতে এই সিদ্ধান্ত স্বতঃপ্রকট। কাউট্‌স্কি যে ঠিক এই সিদ্ধান্ত-ই ‘বিস্মৃত হইয়াছেন’ ও বিকৃত করিয়াছেন, আমাদের পরবর্তী আলোচনায় আমরা তাহা বিশদ-ভাবে দেখাইব।

 ২। সশস্ত্র লোকের বিশেষ প্রতিষ্ঠান, জেলখানা ইত্যাদি

এঙ্গেল্‌স লিখিয়াছেন:

“পুরাতন গোষ্ঠীভিত্তিক [উপজাতিক বা কৌলিক] সংগঠনের তুলনায় রাষ্ট্রের প্রথম পার্থক্যসূচক বৈশিষ্ট্য হইল এই যে, রাষ্ট্র তাহার প্রজাদের আঞ্চলিক ভিত্তিতে ভাগ করে।…”

[১]

 আমাদের কাছে এই রকম বিভাগ ‘স্বাভাবিক’ বলিয়াই মনে হয়। কিন্তু কৌলিক বা গোষ্ঠীভিত্তিক সমাজের পুরাতন কাঠামোর বিকদ্ধে দীর্ঘকাল ধরিয়া সংগ্রাম চলিবার পরেই এই ধরনের বিভাগ দেখা দিয়াছে।

“[রাষ্ট্রের] দ্বিতীয়-বৈশিষ্ট্যসূচক লক্ষণ হইল একটা সার্বজনিক-দণ্ড-যন্ত্রের প্রতিষ্ঠা; এই সশস্ত্র স্বয়ং-সংগঠিত জনগণের সহিত সাক্ষাৎভাবে আর একাত্ম নয়। এই বিশেষ সার্বজনিক-দণ্ড-যন্ত্রের প্রয়োজন দেখা দেয়, কারণ সমাজ বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত হইবার পর হইতে জনসাধারণের স্বয়ংক্রিয় সশস্ত্র সংগঠন অসম্ভব হইয়া পড়ে।…প্রত্যেক রাষ্ট্রের এইরূপ সার্বজনিক-দণ্ড-যন্ত্র

  1. * ‘পরিবার, ব্যক্তিগত সম্পন্ধি ও রাষ্ট্রের উৎপত্তি', নবম অধ্যায়।—অ।