পাতা:রাষ্ট্র ও বিপ্লব — ভি. আই. লেনিন.pdf/১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
প্রথম অধ্যায়: শ্রেণী-বিভক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র
১১

বিভক্ত হইয়া পড়িয়াছে যে তাহাদের মধ্যে আপস-নিষ্পত্তি অসম্ভব, এই সত্যটি চাপা দিয়া সাধারণ লোককে ফলত ঘুম পাড়াইয়াই রাখা হয়। এই-প্রকার বিভাগ না ঘটিলে, ‘জন সাধারণের স্বয়ংক্রিয় সশস্ত্র সংগঠন’ গড়িয়া উঠা সম্ভব হইত; যষ্ঠিধারী বানর অথবা আদিম মানুষের সংগঠনের বা গোষ্ঠীভিত্তিক সমাজে সঙ্ঘবদ্ধ মানুষের আদিম সংগঠনের সহিত জটিলতা উন্নত কর্মকৌশল ও বিষয়ে পার্থক্য থাকিলেও, এই সংগঠন গড়িয়া উঠা সম্ভব হইত।

 এইরূপ সংগঠন এখন অসম্ভব; কারণ, সভ্যতার যুগে সমাজ পরস্পর-বিরুদ্ধ শ্রেণীতে বিভক্ত হইয়া পড়িয়াছে এবং ইহাদের মধ্যে আপস-নিষ্পত্তি সত্যই অসম্ভব এই পরম্পর-বিরুদ্ধ শ্রেণীর ‘স্বয়ংক্রিয়’ ভাবে সশস্ত্র হইলে; তাহাদের মধ্যে সশস্ত্র সংগ্রাম বাধিয়া যাইবে। রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়, সশস্ত্র লোকের বিশেষ বাহিনী রূপে একটি বিশেষ শক্তির সৃষ্টি হয়; এবং শাসক শ্রেণী তাহার খিদমতগার সশস্ত্র লোকের বিশেষ বাহিনীকে কিভাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করিতে চেষ্টা করে এবং নিপীড়িত শ্রেণী কিভাবে এ ধরনের এমন একটা নূতন সংগঠন গড়িয়া তুলিতে প্রয়াস পায় যে-সংগঠন শোষকের বদলে শোষিতদের স্বার্থ চরিতার্থ করিতে সক্ষম—প্রত্যেক বিপ্লব-ই রাষ্ট্রকে বিধ্বস্ত করিয়া সুস্পষ্টরূপে আমাদের তাহা দেখাইয়া দেয়।

 সশস্ত্র লোকের ‘বিশেষ’ বাহিনী এবং ‘জনসাধারণের স্বয়ংক্রিয় সশস্ত্র সংগঠন’—এই দুয়ের মধ্যে সম্পর্ক কী সে-প্রশ্ন প্রত্যেক বড়ো-বড়ো বিপ্লবের সময়েই দেখা দেয়, দেখা দেয় ব্যবহারিক ভাবে, সুস্পষ্টরূপে ও ব্যাপক কর্মক্ষেত্রে; উপরোক্ত আলোচনায় এঙ্গেল্‌স তত্ত্বের দিক হইতে সেই প্রশ্নই উত্থাপন করিয়াছেন। ইউরোপীয় ও রুশ বিপ্লবের অভিজ্ঞতার মধ্যে ইহার মূর্ত নিদর্শন কিভাবে ফুটিয়া উঠিয়াছে, আমরা দেখিতে পাইব।

 এঙ্গেল্‌সের নিবন্ধে ফিরিয়া আসা যাক। তিনি দেখাইয়াছেন, কখনও-কখনও, যেমন উত্তর-আমেরিকার অনেক জায়গাতে, এই সার্বজনিক-দণ্ড-যন্ত্র দুর্বল (পুঁজিতান্ত্রিক সমাজে বিরল একটি ব্যতিক্রমের কথা এঙ্গেল্‌সের মনে হইয়াছে, এবং তিনি সাম্রাজ্যবাদের আগের যুগের উত্তর-আমেরিকায় এমন অনেক জায়গার কথা বলিয়াছেন যেখানে স্বাধীন উপনিবেশিকদেরই প্রাধান্য ছিল); কিন্ত সাধারণত এই শক্তি অধিকতর সবল হইতে প্রয়াস পায়:

রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে শ্রেণীবিরোধ যত তীব্র হইয়া উঠে এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির আয়তন ও লোকসংখ্যা যত দ্রুত বৃদ্ধি পাইতে থাকে, ইহা ততই