পাতা:রোকেয়া রচনাবলী.pdf/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পিপাসা
(মহরম।)


কাল বলেছিলে প্রিয়। আমারে বিদায়
দিবে, কিন্তু নিলে আজ আপনি বিদায়!

*

দুঃখ শুধু এই ছেড়ে গেলে অভাগায়
ডুবাইয়া চির তরে চির পিপাসায়।
যখন যেদিকে চাই,
কেবলি দেখিতে পাই,
“পিপাসা, পিপাসা” লেখা জ্বলস্তু ভাষায়।
শ্রবণে কে যেন ঐ “পিপাসা” বাজায়।

 প্রাণটা সত্যই নিদারুণ তৃষানলে জ্বলিতেছে। এ জ্বালার শেষ নাই, বিরাম নাই, এ জ্বালা অনন্ত। এ তাপদগ্ধ প্রাণ যে দিকে দৃষ্টিপাত করে, সেই দিকে নিজের হৃদয়ের প্রতিবিম্ব দেখিতে পায় পােড়া চক্ষে আর কিছুই দেখি না। পুষ্পময়ী শস্যশ্যামলা ধরণীর আনন্দময়ী মূর্ত্তি আমি দেখি না। বিশ্ব জগতের মনােরম সৌন্দর্য আমি দেখি না। আমি কি দেখি, শুনিবে? যদি হৃদয়ের ফটোগ্রাফ তােলা যাইত, যদি চিত্রকরের তুলিতে হৃদয়ের প্রতিকৃতি অঙ্কিত করিবার শক্তি থাকিত,—তবে দেখাইতে পারিতাম, এ হৃদয় কেমন! কিন্তু সে উপায় নাই।

 ঐ যে মহরমের নিশান, তাজিয়া প্রভৃতি দেখা যায়,—ঢাকঢোল বাজে, লােকে ছুটাছুটি করে, ইহাই কি মহরম? ইহত কেবল খেলা, চর্ম্মচক্ষে দেখিবার তামাসা। ইহাকে কে বলে মহরম? মহরম তবে কি? কি জানি, ঠিক উত্তর দিতে পারিলাম না। কথাটা ভাবিতেই পারি,ওকথা মনে উদয় হইলেই আমি কেমন হইয়া যাই,—চক্ষে অন্ধকার দেখি, মাথা ঘুরিতে থাকে। সুতরাং বলিতে পারি না—মহরম কি?

 আচ্ছা তাহাই হউক, ঐ নিশান তাজিয়া লইয়া খেলাই হউক; কিন্তু ঐ দৃশ্য কি একটা পুরাতন শােকস্মৃতি জাগাইয়া দেয় না? বায়ু-হিল্লোলে নিশানের কাপড় আন্দোলিত হইলে,