ভদ্রের সংখ্যা বাড়িয়া গিয়াছে। সকল জীবিকা ভদ্রের গ্রহণীয় নয়, কেবল কয়েকটি জীবিকাতেই ভদ্রতা বজায় থাকিতে পারে। সেকালের তুলনায় এখন ভদ্রোচিত জীবিকার সংখ্যা অনেক বাড়িয়াছে, কিন্তু ভদ্রের সংখ্যাবৃদ্ধির অনুপাতে বাড়ে নাই। কেতাবী বিদ্যা অর্থাৎ স্কুল-কলেজে লব্ধ বিদ্যা যে জীবিকায় প্রয়োগ করা যায় তাহাই সবাপেক্ষা লোভনীয়। কেরানীগিরির বেতন যতই অল্প হউক, ওকালতিতে পসারের সম্ভাবনা যতই কম হউক, তথাপি এসকলে একটু কেতাবী বিদ্যা খাটাইতে পারা যায়। মুদিগিরি পুরানো লোহা বিক্রয় বা গরুর গাড়ির ঠিকাদারিতে বিদ্যাপ্রয়োগের সুযোগ নাই, সুতরাং এসকল ব্যবসায় ভদ্রোচিত নয়। কিন্তু কেতাবী বৃত্তিতে যখন আর অন্নের সংস্থান হয় না, তখন অপর বৃত্তি গ্রহণ ভিন্ন উপায় নাই। নিতান্ত নাচার হইয়া বাঙালী ভদ্রসন্তান ক্রমশ অকেতাবী বৃত্তিও লইতে আরম্ভ করিয়াছে, কিন্তু খুব সন্তর্পণে বাছিয়া লইয়া। যে বৃত্তি পুরাতন এবং নিম্নশ্রেণীর সহিত জড়িত তাহা ভদ্রের অযোগ্য। কিন্তু যাহার নূতন আমদানি হইয়াছে কিংবা যাহার ইংরেজী নামই প্রচলিত, সেরূপ বৃত্তিতে ভদ্রতার তত হানি হয় না। ছুতারের কাজ, কামারের কাজ, ধোবার কাজ, কোচমানি, মুদিগিরি চলিবে না; কিন্তু ঘড়ি বা বাইসিকেল মেরামত, নকশা আঁকা, ডাইং-ক্লিনিং, চাএর দোকান, মাংসের হোটেল, স্টেশনারি-শপ—এসকলে আপত্তি নাই, কারণ সমস্তই আধুনিক বা ইংরেজী নামে পরিচিত।
পাতা:লঘুগুরু প্রবন্ধাবলী - রাজশেখর বসু.pdf/৩৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২
লঘুগুরু