পাতা:লঘুগুরু প্রবন্ধাবলী - রাজশেখর বসু.pdf/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলা পরিভাষা
৯১

তামা সােনা’ প্রভৃতি নাম পণ্ডিতাগমের পূর্ববর্তী তাই অখ্যাত। পণ্ডিতগণ যদি বৈজ্ঞানিক প্রসঙ্গে ‘প্লাটিনম অ্যালুমিনিয়ম’ প্রভৃতি নামজাদা শব্দের পাশে স্থান দেন, তবে ‘লােহা তামা সােনা’ও পরিভাষা রূপে খ্যাত হবে। যে শব্দ সাধারণে আলগা ভাবে প্রয়ােগ করে তাও পণ্ডিতগণের নির্দেশে পরিভাষা রূপে গণ্য হতে পারে। সাধারণ প্রয়ােগে রুই পুঁটি চিংড়ি তিমি সবই ‘মৎস্য’। কিন্তু পণ্ডিতরা যদি যুক্তি ক'রে স্থির করেন যে ‘মৎস্য’ বললে কেবল বােঝাবে-কান্‌কো-যুক্ত হাত-পা-বিহীন মেরুদণ্ডী অণ্ডজ (এবং আরও কয়েকটি লক্ষণ যুক্ত) প্রাণী, তবে ‘মৎস্য’ নাম পারিভাষিক হবে এবং চিংড়ি তিমিকে বৈজ্ঞানিক প্রসঙ্গে মৎস্য বলা চলবে না।

 বিদ্যাচর্চায় যত পরিভাষা আবশ্যক, সাধারণ কাজে তত নয়। কিন্তু জনসাধারণেও নূতন নূতন বিষয়ের পরিচয় লাভ করছে সেজন্য বহু নূতন পারিভাষিক শব্দ অবিদ্বানেও শিখছে। যে জিনিস সাধারণের কাজে লাগে তার নাম লােকের মুখে মুখেই প্রচারিত হয় এবং সে নাম একবার শিখলে লােকে সহজে ছাড়তে চায় না। পণ্ডিতরা যদি নূতন নাম চালাবার চেষ্টা করেন তবে সাধারণের তরফ থেকে বাধা আসতে পারে। বাংলা পরিভাষা সংকলনকালে এই বাধার কথা মনে রাখা দরকার।

 আমাদের দেশে এখনও উচ্চশিক্ষার বাহন ইংরেজী ভাষা। নিম্নশিক্ষায় মাতৃভাষা চালাবার চেষ্টা হচ্ছে। শিক্ষা উচ্চই