পাতা:লঘুগুরু প্রবন্ধাবলী - রাজশেখর বসু.pdf/৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯২
লঘুগুরু

হােক আর নিম্নই হােক, মাতৃভাষাই যে শ্রেষ্ঠ বাহন তা সকলে ক্রমশ বুঝতে পারছেন। মাতৃভাষায় প্রয়ােগের উপযুক্ত পরিভাষা যতদিন প্রতিষ্ঠালাভ না করবে ততদিন বাহন পঙ্গু থাকবে। অতএব বাংলা পরিভাষার প্রতিষ্ঠা অত্যাবশ্যক। বাংলা দেশ যদি স্বাধীন হ'ত, রাজভাষা যদি বাংলা হ'ত, বহু নব নব দ্রব্য ও বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব যদি এদেশে আবিষ্কৃত হ'ত, তবে আমাদের পরিভাষা দেশীয় ভাষার বশে স্বচ্ছন্দে গড়ে উঠত এবং বিদ্বান অবিদ্বান নির্বিশেষে সকলেই তা মেনে নিত, যেমন ইংলণ্ডে হয়েছে। কিন্তু আমাদের অবস্থা সেরূপ নয়। এদেশে যে বৈজ্ঞানিক আবিষ্ক্রিয়া হয় তা অতি অল্প, যা হয় তার সংবাদ ইংরেজীতেই প্রকাশিত হয়। সুতরাং বাংলা ভাষার জন্য পরিভাষা সংকলিত হ'লেও তার প্রতিদ্বন্দ্বী থাকবে পূর্বপ্রতিষ্ঠিত ইংরেজী শব্দ। দেশের পণ্ডিতমণ্ডলী একমত হয়ে একটা বাংলা পরিভাষার ফর্দ মেনে নিতে পারেন, এমন প্রতিজ্ঞাও করতে পারেন যে তাঁদের পুস্তকে প্রবন্ধে ভাষণে বিলাতী শব্দ বর্জন করবেন (অবশ্য চাকরির কাজে তা পারবেন না)। কিন্তু পরিভাষাদ্বারা সূচিত দ্রব্য যদি বিদেশ থেকে আসে এবং সাধারণের ব্যবহারে লাগে, তবে নূতন নাম চালানাে কঠিন হবে। বিদেশ থেকে আয়ােডিন আসে, প্রেরকের চালানে ঐ নাম লেখা থাকে; দোকানদার ঐ নামেই বেচে—তাকে ‘এতিন’ বা ‘নীলিন’ শেখানাে অসম্ভব। তার মারফৎ জনসাধারণেও ইংরেজী নাম শেখে। যাঁরা