পাতা:লালন-গীতিকা.djvu/১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

lo/o লালন-গীতিকা

সস্তানহীন মুসলমান দম্পতির নিকট আশ্রয় লাভ করিয়া নিরাময় হইয়া উঠিয়াছিলেন ।

মুসলমানের গৃহে লালিত-পালিত হইয়া লালন সিরাজ সাই নামক একটি মুসলমান ফকিরের নিকট হইতে দীক্ষা গ্রহণ করেন। মনসুরউদ্দীন সাহেবের মতে সিরাজ সাই ছিলেন নদীয়া জেলার হরিনারায়ণপুর গ্রামের একজন পান্ধীবাহক। কাহারও মতে সিরাজ সাই ফরিদপুর জেলার কালুখালি স্টেশনের নিকটবর্তী কোনও গ্রামের অধিবাসী । অপর মতে সিরাজ সাই ছিলেন যশোহর জিলার ঝিনাইদহ মহকুমার অন্তর্গত হরিশপুর গ্রামের অধিবাসী। যেখানেই বাড়ি থাক, সিরাজ সাই সম্ভবতঃ ফকিরধর্ম গ্রহণ করিয়া বাঙলার বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরিয়া বেড়াইতেন, লালন ফকিরও সম্ভবতঃ গুরুর সঙ্গে সঙ্গে বাঙলার বহু অঞ্চলে ঘুরিয়া বেড়াইয়াছেন।

কয়েক বৎসর গুরু সিরাজ সাইর সহিত ঘুরিয়া লালন বাড়ি ফিরিয়া আসেন। তীর্থযাত্রী সঙ্গীরা রটাইয়া দিয়াছিল, লালনের মৃত্যু হইয়াছে ; লালনের মা ও স্ত্রী তাহাই জানিত। লালন বাড়ি ফিরিয়া তাহার রোগারোগ্যের সংবাদ এবং মুসলমানের গৃহে লালিত-পালিত হইবার বৃত্তাস্ত জানাইলে মা আর র্তাহাকে ঘরে ফিরাইয়া লইতে রাজি হইলেন না,—স্ত্রীও তাহার সঙ্গিনী হইতে অস্বীকার করিল। লালন তখন সংসারের মায়া সম্পূর্ণ কাটাইয়া পুনরায় গুরু সিরাজ সাইয়ের সঙ্গে মিলিত হইলেন। সম্ভবতঃ সিরাজ সাইয়ের মৃত্যুর পরে লালন কুষ্ঠিয়ার গোরাই নদীর ধারে সেউড়িয়া গ্রামে আসিয়া আস্তানা করেন— সেইখানেই আস্তে আস্তে তাহার আখড়া গড়িয়া উঠিল। লালন এই আখড়াতেই স্থায়িভাবে বাস করিতেন না, বাঙলাদেশের দূর দূর অঞ্চলে তাহার বহু শিষ্য ছিল—তিনি এইসব অঞ্চলে ঘুরিয়া বেড়াইতেন ও নিজের সাধন-ভজনের প্রচার করিতেন। এখনো পর্যস্ত বাঙলার বাউল সম্প্রদায়ের মধ্যে লালন ফকিরের যেরূপ প্রতিষ্ঠা তাহাতে মনে হয় বহু অঞ্চল জুড়িয় তাহার শিষ্য-সেবক ছিল ।