পাতা:লালন শাহ ও লালন গীতিকা.djvu/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

( ) উপরি-উক্ত উক্তি করেছেন। শুধু বাউল গান নয়, গানের ভাষা, বাণী ও ছন্দের অপূর্বতার কথাও তিনি উচ্ছসিত কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন ॥১ রবীন্দ্রনাথের মতে, বাউলদের ধর্মমতই যথার্থ ‘মানব ধর্ম' পদবাচ্য। কেননা, এতে পূর্ণ মানবত্বের প্রকাশ ঘটেছে । মুফী-সাধনা আসলে পূর্ণ মনুষ্ঠত্বেরই সাধন । লালনের গানে বাউল ছদ্মনামে সুফী-সঙ্গীতই আত্মপ্রকাশ করেছে । হিন্দী সাহিত্যে কবিগুরু দাউদ ওরফে দাদু (ষোলো শতক ), সিদ্ধি সাহিত্যে শাহ আবদুল লতীফ ভিটাই (১৬৯৮-১৭৫২), পাঞ্জাবী সাহিত্যে বুলেহ শাহ (১৬৮০-১৭৫৮) সাহেবানের যে স্থান, বাংলা মরমী সাহিত্যে লালন শাহের (১৭৭২-১৮৯০) স্থানও তাই, এ-কথা ভুলে গেলে চলবে না । সত্যি কথা বলতে কি, বাংল। সাহিত্যে বৈষ্ণব ভাববাদ এককালে দেশীয় আবরণে ইসলামী সুফীবাদ তথা পূর্ণ মানবতাবাদের ভিত্তি সুদৃঢ় করতে সাহায্য করেছিল। তাই দেখতে পাই, বৈষ্ণব কবির সাথে সাথে শতাধিক মুসলিম কবিও রাধাকৃষ্ণের রূপকের মাধ্যমে জীবপ্রেম তথা খুদীপ্রেমের মহিমা গান করেছিল । গত শতাব্দীতে পাশ্চাত্ত্য ভাববাদ তথা নিছক মানবতাবাদ যখন এই অধ্যাত্ম-মানবতাবাদকে গদিচু্যত করে স্বীয় প্রভুত্ব কায়েমে তৎপর, ঠিক সেই সময়েই লালন শাহ্ ও তার সম্প্রদায়ের হাতে এই তথাকথিত বাউল মানবতা-বাদের জন্ম নেয় । দেশীয় সমাজে এর নিন্দা-প্রশংসা যাই হোক না কেন, বাউলবাদ যে সেকালের জন-মানসে স্থায়ী স্বাক্ষর অঙ্কিত ক’রতে সক্ষম হ’য়েছিলো, সমকালীন বাঙলার সামাজিক ইতিহাসে তার প্রমাণের অভাব নেই । ভালো করে দেখতে গেলে ১. “এই যে বাংলা বাঙালির দিনরাত্রির ভাষা এর একটি মস্ত গুণ এ ভাষা প্রাণবান। এই জন্য সংস্কৃত বল পারসি বল সব শব্দকেই প্রাণের প্রয়োজনে আত্মসাৎ করতে পারে।” ছন্দ ঃ রবীন্দ্রনাথ । কলিকাতা, ১৯৪৬, পৃঃ ১৩২