সিদ্ধি ১২৫ কাঠকুড়নি বলত, “প্রাণ থাকে না বলেই ত প্রাণের জন্ত্যে এত দরদ ।” তাপস বলত, “আমি খুজি চিরদিন বাচবার পথ । মানুষকে আমি অমর করব।” এই বলে’ সে কত কি বলে’ যেত ; তার নিজের সঙ্গে নিজের কথা, সে কথার মানে বুঝবে কে ? কাঠকুড়নি বুঝত না, কিন্তু আকাশে নবমেঘের ডাকে ময়ুরীর যেমন হয় তেমনি তার মন ব্যাকুল হয়ে উঠত। তার পরে আরো কিছুদিন যায়। তপস্বী মৌন হয়ে এল, মেয়েকে কোনো কথা বলে না । তার পরে আরো কিছুদিন যায়। তপস্বীর চোখ বুজে এল, মেয়েটির দিকে চেয়ে দেখে না। মেয়ের মনে হল সে আর ঐ তাপসের মাঝখানে যেন তপস্যার লক্ষযোজন ক্রোশের দূরত্ব। হাজার হাজার বছরেও এতটা বিচ্ছেদ পার হয়ে একটুখানি কাছে আসবার আশা নেই। তা নাইবা রইল আশা । তবু ওর কান্না আসে, মনে মনে বলে, দিনে একবার যদি বলেন, কেমন আছ, তাহলে সেই কথাটুকুতে দিন কেটে যায়, একবেলা যদি একটু ফল আর জল গ্রহণ করেন তাহলে অন্নজল ওর নিজের মুখে রোচে।
পাতা:লিপিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১৪৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।