১৩২ লিপিক তখনো তার দেহে ক্লান্তি নেই, মনে চিন্তা নেই ; তার রাজপুত্তরের সাজে না লেগেচে ধূলো, না ধরেচে ছিদ্র । সেই অক্লান্ত নিশ্চিন্ত অম্লান প্রাণটিকে দেখলেম এই আষাঢ়ের সকালে, ঐ বট গাছটিতে। সে তার শাখা নেড়ে আমাকে বললে, “নমস্কার ” আমি বললেম, “রাজপুত্তর, মরুদৈত্যটার সঙ্গে লড়াই চল্চে কেমন বল ত ?” সে বললে, “বেশ চলুচে, একবার চারিদিকে তাকিয়ে দেখ না ।” তাকিয়ে দেখি, উত্তরের মাঠ ঘাসে ঢাকা, পূবের মাঠে আউশ ধানের অঙ্কুর, দক্ষিণে বাধের ধারে তালের শার ; পশ্চিমে শালে তালে মহুয়ায়, আমে জামে খেজুরে, এমনি জটলা করেচে যে দিগন্ত দেখা যায় না । আমি বললেম, “রাজপুত্ত্বর, ধন্য তুমি ! তুমি কোমল তুমি কিশোর, আর দৈত্যটা হল যেমন প্রবীণ তেমনি কঠোর ; তুমি ছোট, তোমার তুণ ছোট, তোমার তীর ছোট, আর ও হ’ল বিপুল, ওর বর্শ মোটা, ওর গদা মস্ত। তবু ত দেখি দিকে দিকে তোমার ধ্বজ উড়ল ; দৈত্যটার পিঠের উপর তুমি পা রেখেচ, পাথর মানচে হার, ধুলো দাসখৎ লিখে দিচ্চে।”
পাতা:লিপিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১৮০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।