পাতা:লিপিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পুরোনো বাড়ি

 অনেক কালের ধনী গরিব হয়ে গেছে, তাদেরই ঐ বাড়ি।

 দিনে দিনে ওর উপরে দুঃসময়ের আঁচড় পড়চে। দেয়াল থেকে বালি খসে পড়ে, ভাঙা মেঝে নখ দিয়ে খুঁড়ে চড়ুইপাখি ধুলোয় পাখা ঝাপট দেয়, চণ্ডীমণ্ডপে পায়রাগুলো বাদলের ছিন্ন মেঘের মতো দল বাঁধ্‌ল।

 উত্তর দিকের এক পাল্লা দরজা কবে ভেঙে পড়েচে কেউ খবর নিলে না। বাকি দরজাটা—শোকাতুরা বিধবার মত—বাতাসে ক্ষণে ক্ষণে আছাড় খেয়ে পড়ে, কেউ তাকিয়ে দেখে না।

 তিন মহল বাড়ি। কেবল পাঁচটি ঘরে মানুষের বাস, বাকি সব বন্ধ। যেন পঁচাশি বছরের বুড়ো, তার জীবনের সবখানি জুড়ে সেকালের কুলুপ-লাগানো স্মৃতি;—কেবল একখানিতে একালের চলাচল।

 বালি-ধসা ইঁট-বের-করা বাড়িটা তালি-দেওয়া-কাঁথা-পরা উদাসীন পাগ্‌লার মত রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে;

 আপনাকেও দেখে না, অন্যকেও না।