পাতা:লিপিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গল্প
৪৩

 হিতৈষী একটা কথা ভালো করে ভেবে দেখে না, গল্প রচনার নেশাই হচ্চে সৃষ্টিকর্ত্তার সব-শেষের নেশা; তাঁকে শোধন কর্‌তে না পার্‌লে মানুষকে শোধন করার আশা করা যায় না।

 একদিন তিনি তাঁর কার্‌খানা-ঘরে আগুন থেকে জল, জল থেকে মাটি গড়্‌তে লেগে গিয়েছিলেন। সৃষ্টি তখন গলদ্‌‍ঘর্ম্ম, বাষ্পভারাকুল। ধাতু-পাথরের পিণ্ডগুলো তখন থাকে থাকে গাঁথা হচ্চে;—চারদিকে মালমসলা ছড়ানো আর দমাদম পিটনি। সেদিন বিধাতাকে দেখ্‌লে কোনোমতে মনে করা যেতে পার্‌ত না যে তাঁর মধ্যে কোথাও কিছু ছেলেমানুষী আছে। তখনকার কাণ্ডকার্‌খানা যাকে বলে “সারবান্‌।”

 তার পরে কখন্‌ শুরু হল প্রাণের পত্তন। জাগ্‌ল ঘাস, উঠ্‌ল গাছ, ছুট্‌ল পশু, উড়্‌ল পাখী। কেউবা মাটিতে বাঁধা থেকে আকাশে অঞ্জলি পেতে দাঁড়াল, কেউবা ছাড়া পেয়ে পৃথিবীময় আপনাকে বহুধা বিস্তার করে চল্‌ল, কেউ বা জলের যবনিকাতলে নিঃশব্দনৃত্যে পৃথিবী প্রদক্ষিণ কর্‌তে ব্যস্ত, কেউ বা আকাশে ডানা মেলে সূর্য্যালোকের বেদীতলে গানের অর্ঘ্যরচনায় উৎসুক। এখন থেকেই ধরা পড়্‌তে লাগল বিধাতার মনের চাঞ্চল্য।