পাতা:লিপিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৬৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৪৮
লিপিকা

 ওদের বাসা আর পাশের বাড়িটার অল্প একটুখানি ফাঁকের মধ্যে ঐ রৌদ্রের কাঙাল গাছটি, বিশ্বপ্রকৃতির এই হাবা ছেলে, কেমন-করে’ এসে পড়ে’ যেন বিভ্রান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

 ক্লান্ত মীনু বেলায় উঠ্‌ত। উঠেই সেই গাছটির দিকে চেয়ে দেখ্‌ত সেদিনের মত আর ত তেমন ফুল দেখা যায় না। দাইকে বলত, “আহা দাই, মাথা খা, এই গাছের তলাটি খুঁড়ে দিয়ে রোজ একটু জল দিস্‌।”

 এই গাছে কেন যে ক’দিন ফুল দেখা যায় নি, একটু পরেই বোঝা গেল।

 সকালের আলো তখন আধ-ফোটা পদ্মের মতো সবে জাগ্‌চে, এমন সময় সাজি-হাতে পূজারি ব্রাহ্মণ গাছটাকে ঝাঁকানি দিতে লাগ্‌ল, যেন খাজনা আদায়ের জন্যে বর্গির পেয়াদা।

 মীনু দাইকে বল্‌লে, “শীঘ্র, ঐ ঠাকুরকে একবার ডেকে আন্‌‍।”

 ব্রাহ্মণ আস্‌তেই মীনু তাকে প্রণাম করে বল্লে, “ঠাকুর, ফুল নিচ্চ কার জন্যে?”

 ব্রাহ্মণ বল্‌লে, “দেবতার জন্যে।”

 মীনু বললে, “দেবতা ত ঐ ফুল স্বয়ং আমাকে পাঠিয়েচেন।”