সকল চিন্তায় সুরেশ উন্মত্ত প্রায় হইলেন। হয়ত তিনি আত্মহত্যা করিতেন; এইরুপ সময় সহসা তাঁহার দৃষ্টি এক ব্যক্তির প্রতি পড়িল;—অমনি তাঁহার মনের ভাব পরিবর্তিত হইল। তিনি এই ভদ্রলোকের সহিত কথা কহিতে ব্যগ্র হইলেন।
ইনি একটি বৃদ্ধ ফিরিঙ্গি সাহেব। ইহার সমস্ত কেশ ও লম্বমান শ্বশ্রু শ্বেত হইয়া গিয়াছে। অতি সৌম্যভাব, দেখিলে ভক্তি হয়। দেখিলেই বোধ হয় যেন ইনি শান্তির ক্রোড়ে বিরাজ লাভ করিতেছেন। সুরেশ ইহাকে দেখিয়া সসম্ভ্রমে মস্তকস্থ টুপি খুলিয়া অভিবাদন করিলেন। সাহেব তাঁহাকে সস্নেহে আশীর্বাদ করিয়া কিয়ৎক্ষণ তার দিকে চাহিয়া থাকিয়া বলিলেন, “আমি কি তোমায় কোন সাহায্য করিতে পারি? “সুরেশ বলিলেন, “আমি বিদেশী। “
সাহেব। তোমার চেহারা দেখিয়া তা স্পষ্ট বুঝা যায়। মাদ্রাজে কি জন্য আসিয়াছ?
সুরেশ। কোন চাকুরি পাইবার আশায় এখানে আসিছিলাম, কিন্তু যদিও আমি সর্ব্বত্র চেষ্টা করিয়াছি, তবুও কোথাও কিছু জোগাড় করিতে পারি নাই।
সাহেব। সময়ের পরিবর্তন হইয়াছে। চাকুরী পাওয়া এখন বড়ই কঠিন। আমি বৃদ্ধ হইয়া কার্য্য হইতে অবসর লইয়াছি, আমি যে তোমাকে কোন সাহায্য করিতে পারিব এরূপ বোধ হয় না।
সুরেশ। মহাশয়। আমি প্রায় অনাহারে আছি; আমার নিকট যে অর্থ আছে, তাতে কাল আমি একখানি রুটী কিনিতেও সক্ষম হইব না।