একটা বিজয়ী বীরজাতির চিত্তবৃত্তি বঙ্গে আসিয়া বিভিন্ন পরিণতি প্রাপ্ত হইয়াছে। তাহা স্থানীয় প্রকৃতির বিশ্ববিজয়ী বিজয় নিশান।
বঙ্গের বিস্তৃত বিশ্বস্ত পুরাবৃত্ত নাই, সুতরাং প্রাচীনকালের বীরত্ব গৌরবও নাই। যাহা আছে, তাহা মেকলে প্রমুখ লিপি কুশল ঐতিহাসিকের অমূলক কল্পনা এবং ভারত আকাশের প্রচণ্ড ধুমকেতু মুসলমান ঐতিহাসিকদিগের রচনা। তবে প্রকৃত ইতিহাস কোথায় পাইর। বহুকাল পরপদদলিত ইতিবৃত্তহীন জাতির ইতিবৃত্ত কোথায়? এতকাল পরাধীন, অত্যাচারিত ও পরপদদলিত হইয়াও যাহারা সরল পবিত্র প্রফুল্ল হৃদয় লইয়া জীবিত রহিয়াছে, তাহাদের ইতিহাস কি রূপ। কোন্ অপূর্ব্ব জীবনী শক্তিতে তাহারা প্রাচীন হইয়াও নবীন হৃদয়—শত বিঘ্ন বিপদ পাতেও সদাই উৎফুল্ল—গৃহে গৃহে আনন্দ কোলাহল—হৃদয়ের কোমলতা কিছুতেই ঘুচে না; গৌরবষ্ট হইয়াও গৌরবহীন নহে!
সেই বীরদর্প মৃদুতায় পরিণত হইয়াছে বটে, তাহা বলিয়া বঙ্গভূমি অধুনাও বীরশূন্যা নহে। ইংরাজ ঐতিহাসিক মেকলের তীব্রোক্তি বাঙ্গালী দাসের জাতি; শঠতা, মিথ্যাবাদিতা, ভীরুতা প্রভৃতি যত কিছু নীচতা থাকিতে পারে, বাঙ্গালী জীবন কেবল তাহাতেই গঠিত। আজ বলিয়া নহে চিরকাল। একটী জাতীয় চরিত্রে অতগুলি কলঙ্কের বোঝা চাপাইয়া তিনি আপনার হৃদয়ের দুর্ব্বহ ভার লাঘব করিলেন বলিয়া তাহা ইতিহাস নামে পরিচিত হইবে না। উহা সদাশয় ইংরাজজাতির উপযুক্ত নহে। অথবা ঘাতকের নিকট সুষমাময়ী রমণী বা সহাস্য সুন্দর বালকের সৌন্দর্য্য দেখিবার অবসর কোথায়!