করিয়া জ্ঞানানুরাগ ও অব্যবসায়ের পরাকাষ্ঠা দেখাইয়াছেন, তিনিও যে একজন সবল বঙ্গবাসীর তুল্য বলশালী ছিলেন, তাহা নহে। এইরূপ ইতিহাসের অনন্ত ভাণ্ডার হইতে অসংখ্য উদাহরণ সংগ্রহ করিয়া দেখান বাইতে পারে, কত ক্লাইব মহাবল না হইয়াও স্বদেশীয় সাম্রাজ্য বিস্তৃত করিয়াছেন,—কত ম্যাট্সিনি স্বদেশানুরাগে উদ্দীপিত হইয়া জননীয় বন্ধনশৃঙ্খল ছিন্ন করিয়াছেন,—কত বেলযোনি দুর্গম দেশ-দেশান্ত মৃত্যু তুচ্ছ করিয়া সহস্র সহস্র বর্ষ পূর্ব্বের ভগ্নাবশেব নগরী হইতে প্রাচীন দ্রব্যজাত সংগ্রহ করিতেছেন। কত _ল ব্যক্তির মনস্বিতায় লৌহবর্ত্ম ও সমুদ্র আজি ইংরাজ জাতির বাহন, তাড়িততার তাঁহাদের দূত।
এইরূপ শত শত উদাহরণে দেখা যাইতেছে, মানস বিকাশের জন্য সিংহবিক্রমের আবশ্যকতা নাই। সিংহবিক্রমের আবশ্যকতা তখন, যখন কোন দুর্ব্বল প্রাণীর সংহার করিতে হইবে। আত্ম রক্ষার্থ বা আত্মকর্ত্তব্য অক্ষুণ্ন রাখিবার জন্যও সময়ে সময়ে উহার বিশেব প্রয়োজন। প্রবল যখন দুর্বলের প্রতি অত্যাচার করিতেছে, সেই অত্যাচার নিবারণের জন্য ইহা মানসিক গুণ, এবং অত্যাচার-নিবারণ শক্তিসাপেক্ষ। যখনই কোন মানসিক গুণের নিষ্পত্তির জন্য কার্যপ্রবৃত্তি—তখনই অল্পাধিক শক্তি সামর্থ্যের প্রয়োজন। সেই শক্তি বা শারীর বল তখনই সভ্যতার সাধন স্বরূপ। শিল্প বাণিজ্য বা দর্শনবিজ্ঞান সর্ব্বত্রই এইরূপ। কিন্তু শারীর বলে বলী হইয়া শিল্প বিজ্ঞানাদির উন্নত সোপানে অধিরূঢ় হইয়াও নির্জ্জিত বা বিজিত জাতির মৃত ও জীবিতাবশেষদিগের প্রতি দুর্ব্যবহার বর্ব্বরতারই পরিচায়ক, বীরত্বের নহে।