জাতিই বিজ্ঞানান্ধ ছিল, কিন্তু কোন্ মোহন মন্ত্রবলে সেই সকল অন্ধ জাতির সন্তানদিগের দিব্য চক্ষু ফুটিল? বিজ্ঞানের ক্রমোন্নতিতে অথবা কালবশে? অথবা এই সকল তত্ত্ব কতকগুলি জাতির হৃদয়ে প্রতিফলিত হইবার আবশ্যক হইয়াছিল বলিয়া। প্রকৃতিদেবীর যে দুর্ভেদ্য রহস্য জালের মধ্যে ব্যাঘ্রাদি হিংস্র জন্তুর তীক্ষ্ণ নখর ও দংষ্ট্রা থাকে, বাবুই পক্ষীর কুলায় নির্ম্মাণের জ্ঞান স্বতঃসিদ্ধ বীবরে অপূর্ব্ব কৌশল সেতুবন্ধন সামর্থ্য জন্মে, দূর দেশান্তে গমনাগমন ও অবস্থানের জন্য বিশেষ আবশ্যক স্থলে সেই রূপ ঐ সকল তত্ত্ব উদ্ভাবিত হইয়াছে। তদ্ভিন্ন অমিবা আবার বলিব, এই সকল বিজ্ঞানোন্নতি বর্ত্তমান সভ্যজাতিদিগের চিরন্তন সম্পত্তি নহে। বঙ্গের ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকিলে এ দেশেও উহা অপরিজ্ঞাত থাকিত না?
যে বিজ্ঞান বলে প্রতীচ্য জাতি আজি প্রাচ্য জাতিদিগের উপর আপনাদের দুব্বার প্রভাব বিস্তার করিয়াছে, যে বিজ্ঞান বলে বৃহৎ বৃহৎ কার্য্যালয় সকলই দেবালয় শিল্প, বাণিজ্য প্রভৃতি ধর্ম্মশাস্ত্র, অপরিজ্ঞাত ভূখণ্ডেও উন্নতির পতাকা উড়িতেছে, যে বিজ্ঞানবলে, তাড়িতে বারুদে— সর্ব্বসংহারিণী শক্তির অবতারণা, বঙ্গ বিজ্ঞানদেবীর সেই মোহিনী ও সংহারিণী মুক্তি বিকসিত হয় নাই। বিজ্ঞান এখানে ভিন্ন পথে চলিয়াছে। এখানে দেবীর তারিণী শান্তিময়ী মূর্ত্তি। বঙ্গের বিজ্ঞান—অর্থতত্ব নহে—শিল্প সম্পদ্ নহে—সমুদ্রে বক্ষে সচ্ছন্দে বিহারের উপায় নহে—লোক ক্ষয়কর প্রস্তাব প্রকাশ নহে। বঙ্গের বিজ্ঞান-পরমার্থ বিজ্ঞান—বঙ্গের বিজ্ঞান সংসার ধর্ম্ম বিজ্ঞান—বঙ্গের বিজ্ঞান সুখশান্তি বিজ্ঞান। সংসারে, সমাজে—জীবনে কিরূপ মানব বৃত্তির উৎকর্ষ