কেহ কেহ বলেন, খৃষ্টীয় ৭।৮ম শতাব্দীতে নবদ্বীপ সমুদ্র তীর হইতে মানববাসভূমিরূপে পরিণত হয়। পরে সেনবংশীয়দিগের রাজত্ব সময়ে কি বীরত্বগৌরবে, কি শিক্ষা সভ্যতার বিশেষ প্রসিদ্ধ স্থান ছিল। তদবধি বীরত্ব গৌরবে না হউক, পূণ্যপাণ্ডিত্যে নবদ্বীপ আজিও গৌরবভ্রষ্ট হয় নাই, সেনবংশীয় বা পালবংশীয় রাজাদিগের সময়ে নবদ্বীপের কিরূপ শোভা সম্পত্তি ছিল, আমরা এস্থলে সে কথার উল্লেখ করিয়া পূর্ব্ব স্মৃতির তীব্র তাড়না সহ্য করিতে চাহি না। মুসলমানদিগের প্রবল অত্যাচারের সময়েও নবদ্বীপের কিরূপ অবস্থা ছিল, তাহারই একটু আভাস দিতেছি। কবি জয়ানন্দ বলেন,
“নানাচিত্রে ধাতু বিচিত্র নগরী, নানা জাতি বৈসে তথা।
চুর্ণে বিলেপিত, দেউল, দেহারা, নানাবর্ণ বৃক্ষলতা॥
জয় জয় ধন্য, নদীয়া নগরী, অলকনন্দার কূলে।
কমলাভাষিণী ক্রীড়া করে তথি, রাজিত বকুলমালে॥
প্রতি গৃহোপরি বিচিত্র কলস, চঞ্চল পতাকা উড়ে।
পূর্ব্বে যেন ছিল, অযোধ্যানগরী, বিজুরী ছটকি পড়ে॥
নাট পাঠশাল দীঘী সরোবর কূপ তড়াগ শোভন।
মাঠ মণ্ডপ সুচিত্রিত চত্বর কুন্দতুলসী আয়োপণ॥
প্রতি দ্বারে শোভে অতি বিচিত্র কপাট।
প্রতি গলি নৃত্য-গীত আনন্দিত, প্রতি ঘরে বেদ পাঠ॥
দ্বিজরূপ ধরি দেবতা গন্ধর্ব্ব জন্ম লভিলা নবদ্বীপে।
হইয়া দ্বিজনারী, ইন্দ্র বিদ্যাধরী, সঙ্গীত গঙ্গা সমীপে॥
স্বর্গ ছাড়ি যত গন্ধর্ব্বমণ্ডলী জন্মিল বৈদ্য বনিতা।
দেব ঋষি মুনি দ্বিজ রূপ ধরি অধ্যয়ন শ্রুতি