পাখীরবাসা ভাঙ্গিতে বাহির হইলে স্নেহময়ী জননী ভয় দেখাইলে যেমন বলিয়াছিলেন, “ভয় কি মা।’’ সুরেশচন্দ্রও তদ্রুপ বাল্যকালে সঙ্কটময় ঘটনাতেও আভাস দিয়াছেন, ভয় কাহাকে বলে! নির্ব্বুদ্ধিতাবশে নহে, প্রকৃতিবশে। তিনি জানিতেন, অগ্নিতে হস্তক্ষেপ করিলে হস্ত পুড়িয়া যায় কিন্তু জানিয়া শুনিয়াও আবশ্যক বোধ হইলে তাহাতে বিমুখ হইতেন না।
সুরেশচন্দ্র বাল্যে বড়ই চঞ্চল ছিলেন, যখন যেদিকে যে কার্য্য করিতে ইচ্ছা হইত, সহজে তাহা হইতে বিরত হইতেন না। প্রবল ব্যক্তির বাধায় অগত্যা নিবৃত্ত হইতে হইলেও বিষম ক্রোধে ও অভিমানে তখন বালক সুরেশের চক্ষু দিয়া যেন অগ্নিস্ফুলিঙ্গ নির্গত হইত। কিন্তু সদ্ব্যবহারে বালক আবার তেমনই বশীভূত। শাসনে যাহা দুঃসাধ্য, একটু সহাস্য মুখে একটী মিষ্ট কথায় বালক সুরেশচন্দ্র একেবারে শিষ্ট শান্ত, নিতান্ত আজ্ঞাবহ।
সুরেশচন্দ্রের সমবয়স্কদিগের পক্ষে যাহা দুঃসাধ্য বা অসম্ভব সুরেশচন্দ্রের নিকট তাহা নহে। এইরূপে প্রায় প্রতিদিনই বালক সর্ব্বাঙ্গে অল্পাধিক আঘাত পাইত। আজ উচ্চস্থান হইতে পড়িয়া গিয়াছে, আজ কাটিয়াছে, এইরূপ ক্ষত বিক্ষত হওয়া তাঁহার বাল্য জীবনের প্রাত্যহিক ঘটনা। কিন্তু তজ্জন্য বালকসুলভ ক্রন্দন শুনা যায় নাই। লাগিয়াছে লাগুক, কাটিয়াছে কাটুক; অত্যুচ্চ হইতে লম্ফ প্রদান, অতিরিক্ত দৌড় ও বৃক্ষারোহণ এ সকল হইতে নিবৃত্ত হওয়া যায় না।
কতকগুলি ব্যক্তিকে লক্ষ্য করিলেই বুঝা যায়, তাহারা প্রভুত্ব করিতেই যেন জন্মগ্রহণ করিয়াছে; তাহারা আজ্ঞাবাহক