বিধান করিত তাহা নহে, কি স্বদেশের, কি বিদেশের প্রাচীন বা বর্ত্তমানকালের যে কোন বীরকীর্ত্তি শুনিতে তাঁহার অসীম আগ্রহ, অপার তৃপ্তি। আলেকজাণ্ডারের দিগ্বিজয়, লিওনিডাসের স্বদেশ রক্ষা, সিজার ও হানিবলের বীরবিক্রম, আলফ্রেড ও হেরাল্ড, ব্রুস ও ওয়ালেস, নেপোলিয়ন অথবা ওয়াসিংটনের শৌর্য্যবীর্য্য শ্রবণে বালকের হৃদয় নাচিয়া উঠিত।
ইংরাজী শিক্ষা তখন ভারতে এতদূর প্রসারিত হয় নাই। এখন যেমন জেলায় জেলায় বহুসংখ্যক কলেজ স্কুল স্থাপিত হইয়াছে, তখন তাহা ছিল না। সমগ্র বঙ্গে তিনটী মাত্র উচ্চশিক্ষার স্থান ছিল; হুগলী কলেজ, হিন্দুকলেজ ও কৃষ্ণনগর কলেজ। সুতরাং এই সকল কলেজে নানা স্থান হইতে ছাত্রবৃন্দ আসিয়া বিদ্যাশিক্ষা করিত। বালক সুরেশচন্দ্র এই সকল কলেজের ছাত্রদিগের সহবাস বড় ভালবাসিতেন। তাহারা কলেজে কি শিক্ষা পাইল, সুরেশচন্দ্রের তাহা শুনিতে বা শিখিতে অভিলাষ নহে। সুরেশচন্দ্র তাহাদের অবসরমত অসীম আগ্রহতায় শুনিতে চায়, বীরকাহিনী। কি রূপে কোন্ দেশে কোন্ বীরপুরুষ অপূর্ব্ব বীরত্বে আপনার নাম চিরস্মরণীয় করিয়া রাখি য়াছেন।
শিবাজীর ন্যায় সুরেশচন্দ্রেরও বালকের দল ছিল। তবে ইহাদের কার্য্য বাগানের ফলমূল লুণ্ঠন, পক্ষীশাবক সংগ্রহ এবং ইছামতী তীরে ‘বাঙালীর মৃগয়া’ ‘মাছধরা’। সহচর অনুচরদিগের মধ্যে সুরেশচন্দ্রের অসীম প্রভাব; তাঁহার তর্জ্জনী তাড়নে সকলে তটস্থ। এইরূপে বাল্যকালেও তিনি আপন সম্প্রদায়ের নেতা বা অধিনায়ক ছিলেন।