বালকসুলভ ছুটাছুটি বা বিবিধ উপদ্রবে ক্লান্ত হইয়া পড়িলে সুরেশচন্দ্র বিজ্ঞের ন্যায় সতরঞ্চ লইয়া বসিতেন। হয়ত খেলিবার দ্বিতীয় ব্যক্তি নাই; কিন্তু আপনিই উভয় পক্ষের সতরঞ্চ বাহিনী সাজাইয়া স্বেচ্ছামত একটী জয় পরাজয়ের ব্যবস্থা করিয়া লইতেন। এইরূপে বাল্যের প্রতি সামান্য ঘটনাতেও তাঁহার ভবিষ্য জীবনের অনুকূল ছায়াপাত দেখিতে পাওয়া যায়।
ছয় সাত বৎসরের বালক সতরঞ্চ খেলার যে বিশেষ কিছু বুঝিত তাহা নহে, তথাপি ঐতিহাসিক বা জীবনচরিত লেখকগণ এই সকল সামান্য ঘটনার মূলে যাহাই দেখুন না কেন, জনসাধারণ বুঝিত, সুরেশচন্দ্রের ন্যায় অশান্ত, অশিষ্ট, দুর্ব্বিনীত, দুষ্ট বালক বুঝি আর নাই। কিন্তু সুরেশচন্দ্রের মাতা এক দিনের জন্যও মনে করেন নাই, আমার সুরেশ প্রকৃত দুষ্ট বা অশিষ্ট। পুত্রের বিপদাশঙ্কায় তিনি সর্ব্বদাই সশঙ্ক ছিলেন বটে, কিন্তু একবারের জন্যও সুরেশকে নিতান্ত দুষ্ট স্বভাবের বলিয়া মনে করেন নাই। তিনি যে অন্তর্যামিনী।
সতরঞ্চ খেলা সম্বন্ধে আমাদিগের দেশে একটী কৌতুহলজনক কিম্বদন্তী আছে। লঙ্কাধিপতি রাবণ দোর্দ্দণ্ডপ্রতাপ, দেবলোক তাঁহার দুর্ব্বার বিক্রমে সন্ত্রস্ত। স্বয়ং চণ্ডীদেবী রক্ষপুরীররক্ষয়িত্রী। এইরূপে দৈববলে বলী ও প্রচণ্ড পরাক্রম বিনা যুদ্ধে তাঁহার চিত্তের অবসাদ ঘটে; হৃদয়ে স্ফূর্ত্তি পাইতেন না। পতিব্রতা বুদ্ধিমতী মন্দোদরী স্বামীর অন্তরের গতি বুঝিয়া স্থির করিলেন, এমন একটী উপায় করিতে হইবে, যাজাতে স্বামীর সমরপিপাসা কথঞ্চিৎ নিবৃত্তি হয়। সেই চেষ্টার ফলেই সতরঞ্চ ক্রীড়া। এই চতুরঙ্গসেনাসমন্বিত সতরঞ্চ ক্রীড়ায় চিত্তবিনোদন