শব্দানুসারে যাহা দেখিলেন, তাহাতে বালক কেন, যুবকের হৃদয়ও কল্পিত ও ভীত হইয়া পড়ে। সুরেশচন্দ্র দেখিলেন, একটী প্রকাণ্ড সর্প বৃক্ষ কোটর হইতে বাহির হইয়া গর্জ্জন করিতে করিতে তাঁহার দিকে অগ্রসর হইতেছে। সর্প একবার ফুলিতেছে, আর স্থির দৃষ্টিতে তাঁহার দিকে লক্ষ্য রাখিয়াছে। তাহার চক্ষু দুইটী যেন জ্বলিতেছে। সুরেশচন্দ্র দেখিলেন, নামিবার উপায় নাই, নামিতে হইলে তাহার মুখ অতিক্রম না করিয়া অবতরণ করিবার উপায় নাই। অন্য কেহ হইলে সেই অভাবনীয় বিষম বিপদ্পাতে বিহ্বল বা মূর্চ্ছিত হইয়া পড়িত। সুরেশচন্দ্র সে উপকরণে গঠিত নহেন। ক্ষণেকের মধ্যে তিনি কর্ত্তব্য স্থির করিয়া লইলেন। সে স্থান হইতে লম্ফ প্রদান করিলে জীবন সমধিক বিপন্ন হইবার সম্ভাবনা, তাহাও বুঝিতে বাকি রহিল না। সুরেশচন্দ্র অবিলম্বে শাখান্তরে সর্প হইতে একটু দূরে সরিয়া গেলেন। কিন্তু নামিবার উপায় নাই। এদিকে সর্পটী দেখিল, শিকার সরিয়া যায়। গর্জ্জন করিতে করিতে তীরবেগে সুরেশচন্দ্রের উপর আক্রমণ করিল। সৌভাগ্যক্রমে সেই লক্ষ্য ব্যর্থ হইল; নিকটবর্ত্তী একটি প্রশাখায় তাহার প্রতিরোধ ঘটিল। নিমেষের মধ্যে সুরেশচন্দ্র বুঝিলেন, জীবন রক্ষার অন্য উপায় নাই; ভয়বিহ্বল হইয়া প্রাণ হারাইলে কি হইবে! নিমেষের মধ্যে কর্ত্তব্য স্থির করিয়া প্রথম লক্ষ্য হইতে ফণা তুলিবার পূর্ব্বেই, একাদশ বৎসরের বালক বামহস্তে দৃঢ় মুষ্টিতে উহার ফণা ধরিল। বিপদ বুঝিয়া বল বুদ্ধিও যেন পরিবর্দ্ধিত হইল। সর্প তখন ফুলিতে ফুলিতে বজ্রপাশে বালকের হস্ত বেষ্টন করিতে লাগিল। সুরেশচন্দ্র তাহাতে
পাতা:লেফ্টেন্যাণ্ট সুরেশ বিশ্বাস.djvu/৬২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৮
সর্প ও সুরেশ।