মেমগণ সকলেই তাঁহাকে বড় ভাল বাসিতেন; কুঠির দেশীয় কর্ম্মচারিগণেরও তিনি বড় প্রিয় হইলেন। সকলেই তাঁহাকে বিশেষ যত্ন আদর অভ্যর্থনা করিতে লাগিলেন। তাঁহার সরলভাব, তাঁহার নির্ভরতা, নীচ ও হীন বিষয়মাত্রেই তাঁহার ঘৃণা,পরোপকারে সর্ব্বদাই তাঁহার তৎপরতা, এই সকল গুণে সুরেশ দেখিতে দেখিতে নীলকুঠির সকলেরই একান্ত প্রিয় হইয়া উঠিলেন। তিনি এক দিন কুটিতে না আসিলে সাহেব মেমগণ সকলেই কেবল যে দুঃখিত হইতেন এমন নহে, সকলেই তাঁহার জন্য উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত হইতেন।
যে সময়ের কথা আমরা বলিতেছি, সে সময়ে নীলকুঠির সাহেবেরা প্রায়ই মেম লইয়া বাস করিতেন না। মেমরা দূর ইংলণ্ডে স্বামী বিহনে বিরহে দুঃখে কালাতিপাত করিতেন; সাহেবগণ সহস্র সহস্র ক্রোশ দূরে ম্যালেরিয়া প্রপীড়িত বঙ্গ দেশের গ্রামে দেশীয় কৃষক বেষ্টিত হইয়া নীলের চাষ করিতেন; সে সময়ে বিলাত হইতে মেম অনিবার সুবিধা ছিল না। আনিলেও রাখিবার সুবিধা হইত না। এই জন্য আমরা যে সময়ের কথা বলিতেছি, সে সময়ে এ দেশে নীলকুঠিতে মেম প্রায় দেখিতে পাওয়া যাইত না।
তবে নাথপুর কুঠির সাহেবের মেম এ দেশে ছিলেন, তিনি বালক সুরেশকে দেখিয়া পর্য্যন্ত তাঁহাকে বড়ই ভালবাসিতে লাগিলেন। কয়েক দিনের মধ্যে সুরেশকে তিনি পুত্রনির্ব্বিশেষে ভালবাসিলেন; কারণ তাঁহার নিজের পুত্রও ঠিক সুরেশের এক বয়সী ছিলেন। তাঁহার সে পুত্রকে তিনি নিকটে রাখিতে পারেন নাই; সে বালক দূর বিলাতে লেখাপড়া করি-