তেছিলেন। সুরেশের ইংরাজ-প্রকৃতি-সুলত অনেক গুণ দেখিয়া মেমসাহেব তাঁহাকে নিজ পুত্রের ন্যায় ভালবাসিতেন। সুরেশও বড় আনন্দে ও সুখে নাথপুরে কালকাটাইতে লাগিলেন। সাহেব ও মেমসাহেবের নিকট সদা সর্ব্বদা থাকিয়া সুরেশ বেশ ইংরাজী বলিতে শিখিলেন; যদিও তাঁহার এখনও ইংরাজীভাষায় বিশেষ দখল জন্মে নাই, তবুও বোধ হয় সুরেশ যে রূপ সে সময়ে ইংরাজী বলিতেন, সুরেশের সমবয়সী বাঙ্গালীর ছেলে কেহ তেমন ইংরাজী বলিতে পারিতেন না।
এক দিন বৈকালে সুরেশ মেমসাহেবের সহিত একখানা টম্টম্ গাড়ী চড়িয়া বেড়াইতে বহির্গত হইলেন। মেমসাহেব প্রায়ই সুরেশকে সঙ্গে লইয়া এইরূপ বেড়াইতে যাইতেন। বিস্তৃত নীল’খেতের মধ্য দিয়া বাঁধা রাস্তা, মেমসাহেব এই রাস্তায় উপর দিয়া গাড়ী করিয়া বেড়াইতেন, সুরেশ প্রায়ই সঙ্গে থাকিতেন। মেমসাহেব তাঁহাকে নানা জ্ঞানোপদেশ দিতে থাকিতেন; সুরেশও মেমসাহেবকে এ দেশের নানা গাছ, লতা, পাখীয় নাম ও তাহাদের সম্বন্ধীয় নানা কথা বলিতেন। এই রূপ নানা কথা কহিতে কহিতে তাঁহারা এক এক দিন এক এক দিকে বেড়াইতে যাইতেন। আর মেমসাহেবের গাড়ী একটা অতি প্রাচীন পুষ্করিণীর তীরে আসিয়া দাঁড়াইল। বহু শতাব্দী পূর্ব্বে বোধ হয় কোন সদাশয় ধনাঢ্য ব্যক্তি গ্রামের লোকের জলকষ্ট নিবারণের জন্য এই সুন্দর পুষ্করিণী খনন করিছিলেন। এক্ষণে অযত্নে ইহার আর পূর্ব শোভা নাই, জলও আর বড় পরিষ্কার নাই, পুষ্করিণী প্রায় সেওলা ও জঙ্গলে পুর্ণ হইয়াছে, তবে ইহা বক্ষ অতি সুন্দর ও অতি বৃহৎ পদ্মরাজিতে