কিছু বললেন না; সুরেশ বালক, সে তাঁহার অভিপ্রায় জানিলেও সে কি করিতে পারে?
কিন্তু বালক মেম সাহেবের হৃদয়ের ইচ্ছা বুঝিল। সে বুঝিল মেম সাহেব কয়েকটী পদ্ম পাইলে বড়ই প্রীত হইবেন। যিনি তাঁহার জন্য এত করিয়া থাকেন, যিনি তাঁহাকে পুত্র নির্ব্বিশেষে ভালবাসেন, তাঁহার ইচ্ছা পূর্ণ হইবে না, ইহা কখনই হইতে পারে না বাল্যকাল হইতেই সুরেশ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, একবার তাঁহার মনে কোন ইচ্ছা আসিলে তিনি তাহা কার্য্যে সম্পন্ন করিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করিতেন না। সুরেশ তৎক্ষণাৎ নিজ জামা ও জুতা খুলিলেন। মেমসাহেব তাঁহার অভিপ্রায় বুঝিলেন। এ সময়ে এরূপ পুষ্করিণীতে নামিলে বিপদাশঙ্কা আছে ভাবিরা মেম সাহেব সুরেশকে এরূপ কার্য্য হইতে বিরত করিতে প্রয়াস পাইলেন, কিন্তু সুরেশ কোন কাজ করিতে একবার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হইলে কেহই তাঁহাকে তাহা হইতে বিরত করিতে পারিত না। সহস্র বিপদের আশঙ্কা থাকিলেও সুরেশ তাহা হইতে বিরত হইতেন না। সুরেশ মেমসাহেবকে ভীত বা চিন্তিত হইতে নিষেধ করিয়া ছুটিয়া গিষা পুষ্করিণীর জলে ঝম্প প্রদান করিলেন। তৎপরে তিনি জল ঠেলিয়া যেখানে পদ্ম ফুটিয়া ছিল, সেই দিকে চলিলেন। পুষ্করিণীতে অধিক জল ছিল না, কাজেই সুরেশ সাঁতার দিয়া যাইতে পারিলেন না, হাঁটিয়া চলিলেন।
কিন্তু সুরেশ পদ্ম আনয়ন করা যত সহজ মনে করিয়াছিলেন, তত সহজ কার্য্য বলিরা বোধ হইল না। সুরেশ কিছু দূর গিয়াই আর সহজে অগ্রসর হইতে পারিলেন না—বোধ হইল যেন তিনি