ধনী নহেন যে তাহকে একখানা নৌকা কিনিয়া দেন; সহরের দাঁড়ী মাজীগণ এরূপ নহে যে কেবল কথায় তাঁহাকে নৌকা চড়িতে দিবে। যাহা হউক তিনি অতি আয়াসে অবশেষে একটা “রোয়িং ক্লব” স্থাপনা করিলেন। কোন গতিকে একখানা নৌকাও সংগ্রহ হইল। তিনি তাঁহার সমবয়স্ক পল্লিস্থ অন্যান্য বালকগণকে লইয়া প্রত্যহ বৈকালে গঙ্গায় নৌকারোহণ করিতে আরম্ভ করিলেন।
এপ্রেল মাসের এক দিন আর চারিটা সমবয়স্ক বালক সমভিব্যাহারে সুরেশ নৌকা খুলিয়া গঙ্গাবক্ষে দাঁড় টানিয়া চলিলেন। গার্ডেনরিচের নিকট নৌকা পৌঁছিলে আকাশে একটু কাল মেঘ দেখা দিল, কিন্তু আকাশ তখনও বেশ পরিষ্কার, ঝড় বৃষ্টি হইবার কোন সম্ভাবনা নাই;—রৌদ্র তখনও খুব প্রখর, তবে বাতাস একবারে নাই,—গরমও অসহ্য হইয়াছে। কিন্তু ক্রমে সেই ক্ষুদ্র কাল মেঘ দেখিতে দেখিতে বড় হইল,—সুর্য্য ঢাকিয়া ফেলিল, আকাশ কাল মেঘে পূর্ণ হইয়া গেল, দেখিতে দেখিতে বাতাস প্রবল হইল। অর্দ্ধ ঘণ্টা যাইতে না যাইতে গঙ্গাবক্ষে ঘোর রোলে প্রবল ঝটিকা উঠিল। বোধ হইল যেন সহসা ইন্দ্র বরুণ বায়ু প্রভৃতির মধ্যে সহসা গৃহবিবাদ ঘটিয়া সকলে সকলের প্রতি ক্রোধান্ধ হইয়া অস্ত্রশস্ত্র লইয়া ধাবিত হইলেন। সুরেশের ক্ষুদ্র নৌকা এই প্রলয়ে পড়িয়া যায় যায় হইল।
সুরেশ ও তাঁহার সঙ্গীগণের কেহই আকাশের ভাবগতিক কখন কি রূপ থাকে তাহা জানিতেন না। এপ্রেল ও মে মাসে বাঙ্গলাদেশে কি রূপ সহসা ঝড় উঠে —কিরূপে সামান্য মেঘ