এই সময়ে লণ্ডন মিশন কলেজের প্রিন্সিপাল আসটন সাহেব ছিলেন। তিনিও সুরেশকে ভাল করিবার জন্য বিশেষ চেষ্টা করিয়াছিলেন, কিন্তু তিনিও কিছু করিয়া উঠিতে পারেন নাই। ঘরে বাহিরে সর্ব্বত্র সুরেশ লাঞ্ছিত হইতেন, কিন্তু কিছুতেই তাঁহার দৃক্পাত নাই। অবশেষে পিতা নিতান্ত উৎপীড়ন আরম্ভ করায় সুরেশ পিতার সহিত সাক্ষাৎ হইবে ভয়ে মধ্যে মধ্যে ৫।৭ দিন আর বাড়ী যাইতেন না। অনেক খ্রীষ্টান বালকের সহিত তাঁহার বন্ধুত্ব জন্মিয়াছিল, তিনি বাড়ী না গিয়া ইহাদের বাসায় আহারাদি করিয়া রাত কাটাইতেন। কাজেই খৃষ্টানের প্রতি তাঁহার পূর্ব্বে যে ভাব ছিল, তাহা এক্ষণে আর ছিল না। তিনি এক্ষণে বিনা দ্বিধায় খ্রীষ্টানদিগের সহিত আহার বিহার করিতেন, হিন্দুধর্ম্মে তাঁহার আস্থা ছিল না,—তিনি অন্য বিষয়েও যেরূপ উচ্ছৃঙ্খল হইয়াছিলেন, ধর্ম্ম আচার ব্যবহার, আহার বিচার সকল বিষয়েই সেইরূপ উচ্ছৃঙ্খল হইয়া ছিলেন। এই সময়ে খ্রীষ্টান মিশনারীগণ এ দেশীয়গণকে খ্রীষ্টান করিবার জন্য বিশেষ যত্ন করিতেন, সুরেশকেও খ্রীষ্টান করিবার জন্য যে প্রয়াস পাইয়াছিলেন, তাহা বলা বাহুল্য। আমরা এই স্থানে মিশনারী ও মিশন সম্বন্ধে দুই একটী কথা বলিব।
মিশনারী সাহেবদিগের দ্বারা দেশের যে উপকার হয় নাই, এ কথা আমরা বলি না, তবে বিলাতের লোকের বিশ্বাস যে যাহারা মিশনারী হইয়া এ দেশে আইসেন, তাঁহারা আত্মোৎসর্গ ও স্বার্থত্যাগের চুড়ান্ত দৃষ্টান্ত দেখাইয়া থাকেন। তাঁহারা মনে করেন মিশনারী সাহেবেরা এ দেশে বড়ই কষ্টে কালযাপন করেন। একথা যে সত্য নহে, তাহা বলা বাহুল্য মাত্র।