ব্যাক্সাচাৰ্য্য বৃহল্লাঙ্গুল & ষেরূপ অরক্ষিত—নখ দন্তু শৃঙ্গাদি বর্জিত গমনে মন্থর এবং কোমলপ্রকৃতি, তাহ দেখিয়া বিস্মিত হইতে হয় যে, কি জন্ত ঈশ্বর ইহাদিগকে সৃষ্টি করিয়াছেন। ব্যাস্ত্ৰ জাতির সেবা ভিন্ন ইহাদিগের জীবনের আর কোন উদেশ্ব দেখা যায় না। এই সকল কারণে, বিশেষ তাহাদিগের মাংসের কোমলতা হেতু, আমরা মনুষ্য জাতিকে বড় ভাল বাসি। দৃষ্টি মাত্রেই ধরিয়া খাই। আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে, তাহারাও বড় ব্যাক্সভক্ত। এই কথায় যদি আপনারা বিশ্বাস না করেন, তবে তাহার উদাহরণ স্বরূপ আমার যাহা ঘটিয়াছিল, তদ্ভূত্তান্ত বলি। আপনার অবগত আছেন, আমি বহুকালাবধি দেশ ভ্রমণ করিয়া বহুদশা হইয়াছি। আমি যে দেশে প্রবাসে ছিলাম, সে দেশ এই ব্যাস্ত্রভূমি সুন্দরবনের উত্তরে আছে। তথায় গো মচুন্যাদি ক্ষুদ্রাশয় অহিংস্র পশুগণই বাস করে। তথাকার মনুষ্য দ্বিবিধ ; এক জাতি কৃষ্ণবর্ণ, এক জাতি শ্বেতবর্ণ। একদা আমি সেই দেশে বিষয় কৰ্ম্মোপলক্ষে গমন করিয়াছিলাম।” শুনিয়া মহাদংষ্ট্রানামে এক জন উদ্ধতস্বভাব ব্যাস্ত্র জিজ্ঞাসা করিলেন, “বিষয়কৰ্ম্মটা কি ?” বৃহল্লাঙ্গুল মহাশয় কহিলেন, “বিষয় কৰ্ম্ম, আহারান্বেষণ। এখন সভ্যলোকে আহারান্বেষণকে বিষয় কৰ্ম্ম বলে। ফলে সকলেই যে আহারান্বেষণকে বিষয় কৰ্ম্ম বলে, এমত নহে। সম্রান্ত লোকের আহারান্বেষণের নাম বিষয় কৰ্ম্ম, অসম্রাস্তের আহারান্বেষণের নাম জুয়াচুরি, উদ্ধৃবৃত্তি এবং ভিক্ষ। ধুর্তের আহারান্বেষণের নাম চুরি ; বলবানের আহারান্বেষণ দসু্যতা ; লোকবিশেষে দ্যুতা শব্দ ব্যবহার হয় না ; তৎপরিবর্তে বীরত্ব বলিতে হয়। যে দসু্যর দণ্ডপ্রণেতা আছে, সেই দমু্যর কার্য্যের নাম দস্থ্যতা ; যে দস্থ্যর দণ্ডপ্রণেতা নাই, তাহার দস্থ্যতার নাম বীরত্ব । আপনার যখন সভ্যসমাজে অধিষ্ঠিত হইবেন, তখন এই সকল নামবৈচিত্র্য স্মরণ রাখিবেন, নচেৎ লোকে অসভ্য বলিবে । বস্তুতঃ আমার বিবেচনায় এত বৈচিত্র্যের প্রয়োজন নাই ; এক উদর-পুজা নাম রাখিলেই বীরত্বাদি সকলই বুঝাইতে পারে। সে যাহাই হউক, যাহা বলিতেছিলাম, শ্রবণ করুন মমুস্থ্যের বড় ব্যাক্সভক্ত। আমি একদা মনুষ্যবসতি মধ্যে বিষয়কৰ্ম্মোপলক্ষে গিয়াছিলাম। শুনিয়াছেন, কয়েক বৎসর হইল, এই সুন্দরবনে পোর্ট ক্যানিং কোম্পানি স্থাপিত হইয়াছিল ” মহাদংষ্ট্র পুনরায় বক্তৃত বদ্ধ করাইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “পোর্ট ক্যানিং কোম্পানি কিরূপ জন্তু ?”
পাতা:লোকরহস্য-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
