বামী। আচ্ছা ভাই, শাস্ত্রে যদি লেখে ত না হয় মরিব। কিন্তু জিজ্ঞাসা করি, কেবল কি ভিম্রুলের ডাকে মরিতে হইবে, না বোলতা মৌমাছি গুব্রে পোকার ডাক শুনিলেও অন্তর্জলে শুইব?
রামী। কবিরা শুধু ভ্রমরের রবেই মরিতে বলেন।
বামী। কবিদের বড় অবিচার। কেন, গুব্রে পোকা কি অপরাধ করেছে?
রামী। তোর মর্তে হয় মরিস্, এখন শোন্।
বামী। বল।
রামী। কোকিলগণ বৃক্ষে বসিয়া পঞ্চম স্বরে গান করিতেছে।
শ্যামী। পঞ্চম স্বর কি ভাই?
রামী। কোকিলের স্বরের মত।
শ্যামী। আর কোকিলের স্বর কেমন?
রামী। পঞ্চম স্বরের মত।
শ্যামী। বুঝিয়াছি। তার পর বল।
রামী। কোকিলগণ বৃক্ষে বসিয়া পঞ্চম স্বরে গান করিতেছে; তাহাতে বিরহিণীর অঙ্গ জ্বর জ্বর হইতেছে।
বামী। আর কুঁক্ড়োর পঞ্চম স্বরে অঙ্গ কেমন করে?
রামী। মরণ আর কি, কুঁক্ড়োর আবার পঞ্চম স্বর কি লো?
বামী। আমার তাতেই অঙ্গ জ্বর জ্বর হয়। কুঁক্ড়া ডাকিলেই মনে হয় যে, তিনি বাড়ী এলেই আমায় ঐ সর্ব্বনেশে পাকী রাঁধিয়া দিতে হবে।
রামী। তার পর মলয় সমীরণ। মৃদু মৃদু মলয় সমীরণে বিরহিণী সিহরিয়া উঠিতেছে।
শ্যামী। শীতে?
রামী। না—বিরহে। মলয় সমীরণ অন্যের পক্ষে শীতল, কিন্তু আমাদের পক্ষে অগ্নিতুল্য।
বামী। সই, তা সকলের পক্ষেই। এই চৈত্র মাসের দুপুরে রৌদ্রের বাতাস আগুনের হল্কা বলিয়া কাহার বোধ হয় না?
রামী। ওলো, আমি সে বাতাসের কথা বলিতেছি না।
শ্যামী। বোধ হয়, তুমি উত্তুরে বাতাসের কথা বলিতেছ। উত্তুরে বাতাস যেমন ঠাণ্ডা, মলয় বাতাস তেমন নয়।