স্থবৰ্ণগোলক 8ፃ কালীকান্ত অস্তিরিক কাতরতার সহিত হাত যোড় করিয়া বলিতে লাগিল, “দোহাই বৌঠাকুরাণি, আপনার সাত দোহাই—আমাকে ছাড়িয়া দিন—আপনি আমার স্বভাব জানেন না—আমি সে চরিত্রের লোক নই।” কামস্বন্দরী হাসিয়া বলিল, “তুমি যে চরিত্রের লোক, আমি বেশ জানি—এখন জল খাও।” কালীকান্ত বলিল, “যদি আপনার কাছে কেহ আমার এমন নিন্দ করিয়া থাকে, তবে সে ঠক—ঠকাম করিয়াছে । আপনার কাছে হাতযোড় করিতেছি, আপনি আমার গুরুজন—আমায় ছাড়িয়া দিন " কামসুন্দরী রসিকতাপ্রিয় ; মনে করিল যে, এ একতর নূতন রসিকতা বটে। বলিল, “প্রাণাধিক, তুমি কত রসিকতা শিখিয়া আসিয়াছ, তাহা বুঝা যাইবে।” এই বলিয়া স্বামীর দুই হস্ত ধারণ করিয়া আসনে বসাইবার জন্ত টানিতে লাগিল । হস্তধারণ মাত্র কালীকান্ত সৰ্ব্বনাশ হইল মনে করিয়া “বাবা রে, গেলাম রে, এগো রে, আমায় মেরে ফেল্লে রে” বলিয়া চীৎকার আরম্ভ করিল। চীৎকার শুনিয়া গৃহস্থ সকলে ভীত হইয়া দৌড়িয়া আসিল । মা, ভগিনী, পিসী প্রভৃতিকে দেখিয়া কামসুন্দরী স্বামীর হস্ত ছাড়িয়া দিল। কালীকান্ত অবসর পাইয়া উৰ্দ্ধশ্বাসে পলায়ন করিল। গৃহিণী কামসুন্দরীকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি লা কামি—জামাই অমন করে উঠলে কেন ? তুই কি মেরেছিস্ ?” বিস্মিত কামসুন্দরী মৰ্ম্মপীড়িত হইয়া কহিল, “মারিব কেন ? আমি মারিব কেন—আমার যেমন পোড়া কপাল |” ক্রমে ক্রমে মুর র্কাদনিতে চড়িতে লাগিল— “আমার যেমন পোড়া কপাল—কোন আবাণী আমার সৰ্ব্বনাশ করেছে—কে ওষুধ করেছে—” বলিতে বলিতে কামসুন্দরী র্কাদিয়া হাট লাগাইল । সকলেই বলিল, “ই তুই মেরেছিস্ ; নহিলে অমন করে কাতরাবে কেন ”ি এই বলিয়া সকলে, কামকে “পাপিষ্ঠী” “ডাইনী” “রাক্ষসী” ইত্যাদি কথায় ভৎসনা করিতে লাগিল। কামসুন্দরী বিনাপরাধে নিন্দিত ও ভংসিত হইয়া কাদিতে কঁাদিতে ঘরে গিয়া দ্বার দিয়া শুইয়া পড়িল ।
- এদিকে কালীকান্ত বাহিরে আসিয়া দেখিল যে, বড় একটা গোলযোগ বাধিয়া উঠিয়াছে। নীলরতনবাবু স্বয়ং এবং দ্বারবান ও উদ্ধব, সকলে পড়িয়া যে যেখানে পাইতেছে, সে সেইখানে রামাকে প্রহার করিতেছে ; কিল, লাতি, চড়, চাপড়ের বৃষ্টির মধ্যে রামা চাকর কেবল বলিতেছে, “ছেড়ে দে রে, বাবা রে, জামাই মারে, এমন কখন শুনি নাই,
- ;ே *